বিশ্বজুড়ে যখন উত্তেজনার ঘনঘটা, তখন আরও এক নতুন ঘটনার জন্ম দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জুলাইয়ে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য ব্রিকস সম্মেলনে তিনি সরাসরি অংশ নিচ্ছেন না—আর এর পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ঝুঁকি।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত কিছুটা শিথিল হলেও গাজার পরিস্থিতি রয়ে গেছে চরম মানবিক বিপর্যয়ে। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের অবস্থান বরাবরই আগ্রাসী ও দৃঢ়। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে আসন্ন বৈঠকগুলো, যার মধ্যে ব্রিকস সম্মেলন অন্যতম।
কিন্তু এ মুহূর্তে বিশ্ব রাজনীতির এক বিতর্কিত মুখ পুতিন উপস্থিত থাকছেন না সেখানে। ফলে প্রশ্ন উঠছে—বিশ্বনেতারা আসলে কতটা দায়মুক্ত? পুতিনের অনুপস্থিতি কি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল না, শক্তিশালী নেতাদের হাতও রক্তমাখা? কেউ সরাসরি অপরাধ করেছে, কেউ দিয়েছে মৌন সম্মতি।
২০২৩ সালের মার্চে আইসিসি পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অভিযোগ, ইউক্রেন আগ্রাসনের সময় সেখানকার শিশুদের অবৈধভাবে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ অভিযোগেই আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে ব্রাজিলের দায়িত্ব ছিল, পুতিন সেখানে পা রাখলেই তাকে গ্রেপ্তার করা।
এই বাস্তবতায় পুতিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি ব্রিকস সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন। ক্রেমলিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানান, ‘আইসিসির বিধিনিষেধ ও জটিলতা বিবেচনায় রেখে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
পশ্চিমা একাধিপত্যের বিরুদ্ধে এক বিকল্প শক্তি হিসেবে ব্রিকসকে তুলে ধরেন পুতিন। রাশিয়া, চীন, ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার সমন্বয়ে গঠিত এই জোট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বার্তা দিলেও, আইনি জটিলতা এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।
২০২৩ সালেই আইসিসির পরোয়ানা জারির পর পুতিন মঙ্গোলিয়া সফরে যান, যেটি আইসিসির সদস্য। তখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে মঙ্গোলিয়া সরকার। এবার যেন আর সে ঝুঁকি নিতে রাজি নন পুতিন।
বিশ্বব্যবস্থা এখন এমন এক বাস্তবতায় দাঁড়িয়েছে, যেখানে অপরাধের দায় এড়ানো যাচ্ছে না; কিন্তু ন্যায়বিচারের চর্চাও অসম্পূর্ণ। পুতিনের ব্রিকস বর্জন সে সত্যকেই যেন আরও একবার সামনে এনে দিল—এই বিশ্বরাজনীতিতে সবাই কোনো না কোনোভাবে দায়ী।
প্রশ্ন হলো, কে কতটা স্বীকার করে নিচ্ছেন সেই দায়?
সূত্র : দ্য মস্কো টাইমস।
মন্তব্য করুন