রাশিয়ার ওয়াগনার বাহিনীর স্বল্পস্থায়ী বিদ্রোহ দমাতে রাজধানী মস্কোতে নেওয়া হয়েছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে বাহিনীটি বিদ্রোহ থেকে সরে এলেও এখনো রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়েছে। এ বিদ্রোহকে পুতিনের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে বিভিন্ন পক্ষ। তবে বিদ্রোহের পর ওয়াগনার বাহিনী বা এর প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
গত শুক্রবার রাশিয়ার সামরিক নেতাদের উৎখাত করার হুমকি দেন ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। এরপর শনিবার রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রোস্তভ-অন-দন দখলের পর রাজধানী মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল ওয়াগনার বাহিনী। এর মধ্যেই মস্কোতে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করে পুতিন সরকার। পুতিনের কড়া হুঁশিয়ারিতে শেষ পর্যন্ত মস্কো অভিমুখে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন ওয়াগনার নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন।
রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্রোহ শেষ হলেও নিরাপত্তার কারণে লোকজনকে সোমবার কাজে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এর আগে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো জানিয়েছিলেন, ওয়াগনার বাহিনীর মস্কো অভিমুখী পদযাত্রা স্থগিত করতে তিনি প্রিগোজিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় প্রিগোজিন তার প্রস্তাব গ্রহণে সম্মত হন বলেও জানায় লুকাশেঙ্কোর কার্যালয়। তবে এ সমঝোতা নিয়ে এখনো অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে। সমঝোতা অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রিগোজিনের।
এ বিষয়ে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রিগোজিন এবং তার সৈন্যদের বিরুদ্ধে যে আইনগত পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর কোনো বিচার হবে না।
কোথায় প্রিগোজিন?
সমঝোতা অনুযায়ী কথা ছিল বেলারুশে চলে যাবেন ওয়াগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। তবে এ খবর শুধু ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের মুখ থেকেই শোনা গিয়েছিল। বর্তমানে প্রিগোজিন এখন কোথায় রয়েছেন, সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। শেষবার তাকে দেখা গিয়েছিল শনিবার সন্ধ্যায়। ওই সময় একটি গাড়িতে থাকা অবস্থায় উৎফুল্ল কিছু লোকজনের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা যায় তাকে।
কী হতে পারে প্রিগোজিনের ভবিষ্যৎ?
বিবিসির এক সাংবাদিকের মতে, ওই সমঝোতা যে প্রিগোজিনের পক্ষে গেছে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ক্রেমলিনের কথা সত্য হলে এর অর্থ–বেলারুশে নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে প্রিগোজিনকে।
বর্তমানে রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ রয়েছে। ওই এলাকাটিকে নো-ফ্লাই জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে রুশ সরকার। রোস্তভ শহরের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা বিমানবন্দর ভলগোগ্রাদ এবং সচি। কিন্তু এই দুই বিমানবন্দরের অবস্থান প্রায় ২৫০ মাইল দূরে।
বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, প্রিগোজিন যদি গাড়িতে বা ট্রেনে করে বেলারুশ যান, তাহলে সেই পথ অনেক দীর্ঘ হবে। এ পথ অনুসরণ করলে তাকে যেতে হবে ইউক্রেনের বাইরে দিয়ে।
বিদ্রোহের পর কী করবেন পুতিন?
এখন অবশ্যই পুতিন তার ক্ষমতা দেখাবেন বলে মনে করছেন বিবিসির রুশ বিভাগের সাংবাদিক ওলগা ইভশিনা। তিনি বলছেন, এ ঘটনার পর রাশিয়ায় খর্ব হতে পারে অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা। নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে টেলিগ্রাম চ্যানেলসহ সংবাদমাধ্যম।
কী করবেন ওয়াগনার যোদ্ধারা?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে ওয়াগনার যোদ্ধারা। বিদ্রোহের শুরুতে তারা শহরটির সামরিক ঘাঁটিগুলো দখল করে নিয়েছিল। পরে রোস্তভ ও মস্কোর মধ্যবর্তী একটি শহর ভরোনেঝও দখল করে তারা।
ওয়াগনার যোদ্ধারা ফিরে যাওয়ার পর এখন তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে না। তারা কী ইউক্রেনে ফিরে যাচ্ছে, নাকি অন্য কোথাও যাচ্ছে—তাও পরিষ্কার নয়।
মন্তব্য করুন