অনেক তর্কবিতর্কের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট রাজনৈতিক আশ্রয়সংক্রান্ত নিয়মকানুনের সংস্কারের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
১০টি আইনের আওতায় এই রাষ্ট্রজোটের বহিঃসীমানায় আরও কড়া নিয়ম চালু হবে এবং সব সদস্য দেশ সম্মিলিতভাবে এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব বণ্টন করে নেবে। ফলে এবার থেকে শুধু গ্রিস ও ইটালির মতো দেশকে শরণার্থীদের ঢল আর একা সামলাতে হবে না। শরণার্থীরাও আর বিচ্ছিন্ন আশ্রয় নীতির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইইউর একাধিক সদস্য দেশে স্বীকৃতির চেষ্টা চালাতে পারবেন না।
উল্লেখ্য, এর আগে ইইউর বেশিরভাগ সদস্য দেশের সরকার সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল। ইউরোপীয় কমিশন সেই সব আইন কার্যকর করার উপায় বাতলে দেওয়ার পর ২০২৬ সাল থেকে সেই উদ্যোগ কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এগুলো হলো-
১. ইইউর ‘অ্যাসাইলাম অ্যান্ড মাইগ্রেশন প্যাক্ট’ অনুযায়ী অনিয়মিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করা অভিবাসীদের পরিচয় দেখা হবে।
২. নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়মিত খতিয়ে দেখা হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে। এ ছাড়াও অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসীদের মুখের বায়োমেট্রিক রিডিং এবং আঙুলের ছাপ নথিভুক্ত করা হবে। এসবের জন্য সাত দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
৩. অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসী শিশুরা বিশেষ যত্ন পাবে। সদস্য দেশগুলোকে স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রত্যেকের অধিকার বজায় থাকে।
এ-সংক্রান্ত ডয়েচে ভেলের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এরফলে এখন থেকে শুধু গ্রিস ও ইতালির মতো দেশকে শরণার্থীদের ঢল আর একা সামলাতে হবে না। শরণার্থীরাও আর বিচ্ছিন্ন আশ্রয় নীতির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইইউর একাধিক সদস্য দেশে স্বীকৃতির চেষ্টা চালাতে পারবেন না। উল্লেখ্য, এর আগে ইইউর বেশিরভাগ সদস্য দেশের সরকার সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল। ইউরোপীয় কমিশন সেই সব আইন কার্যকর করার উপায় বাতলে দেওয়ার পর ২০২৬ সাল থেকে সেই উদ্যোগ কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আশ্রয়সংক্রান্ত অভিন্ন নীতি কার্যকর হলে রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুরোধ বহিঃসীমানার বাইরেই যাচাই করা হবে৷ যাদের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সম্ভাবনা কম, তাদের সেখান থেকেই যত দ্রুত সম্ভব কোনো ‘নিরাপদ’ দেশে প্রত্যর্পণ করা হবে৷ সেই লক্ষ্যে নতুন সীমানা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। যারা প্রবেশের সুযোগ পাবে, ইইউর বিভিন্ন দেশে তাদের বণ্টন করা হবে। কোনো সদস্য দেশ আশ্রয়প্রার্থীদের নিতে রাজি না হলে অর্থ বা অন্যান্য সম্পদ দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এই বোঝাপড়াকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সংহতির উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন। ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন পার্লামেন্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এর ফলে একই সঙ্গে ইউরোপের সীমান্ত নিরাপদ রাখা এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা সম্ভব হবে। তার মতে, কোন পরিস্থিতিতে কোন বহিরাগত প্রবেশ করতে পারবে, এবার থেকে ইইউ দেশগুলোই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আদম ব্যবসায়ী ও মানব পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী ও সংসদীয় ক্ষমতাকেন্দ্র এমন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে উৎসাহ দেখালেও একাধিক শরণার্থী সহায়তা সংগঠন ইইউর নতুন অভিন্ন নীতির সমালোচনা করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, এর ফলে আরও বেশি মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। রেড ক্রস ইইউর উদ্দেশ্যে শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছে। ব্রাসেলসে ইইউ পার্লামেন্ট ভবনের সামনেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা গেছে।
মন্তব্য করুন