বিশ্বজুড়ে বেড়েই চলছে তাপদাহ। তাপমাত্রা রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়ছে প্রতিনিয়ত। জলবায়ু পরিবর্তনের এ ছাপ আবহাওয়ার সঙ্গে পড়ছে ভূ-স্তরেও। পরিবর্তনের এই ছাপকে ‘চিরস্থায়ী’ বলে মনে করছেন ভূতাত্ত্বিকেরা।
কানাডার একটি হ্রদের পলিস্তর বিশ্লেষণ করে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভূতাত্ত্বিকদের মতে, মানুষ তাদের কাজ, আচার-আচরণ ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পৃথিবীর ভূতত্ত্বের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সৃষ্টি করতে চলেছে। যে যুগকে ‘অ্যান্থ্রোপোসিন’ বা ‘মনুষ্য’ যুগ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। যার প্রভাব একেবোরে ভালো নয়। এই সময়কালে জীবাশ্মজনিত জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রজাতির পর প্রজাতি বিলুপ্তিসহ মানুষের নানা নেতিবাচক চিহ্ন দেখা গেছে।
ভূতাত্ত্বিক হিসাবে পৃথিবীর বয়স আনুমানিক সাড়ে ৪০০ কোটি বছর। তারমধ্যে মনুষ্য প্রজাতির অস্তিত্ব মাত্র ৩০০ হাজার বছরের, যা পৃথিবীর ইতিহাসের ০০০৭ ভাগ। বর্তমানে আমরা যে যুগে বসবাস করছি তার নাম ‘হলোসিন যুগ’। এ যুগের শুরু হয়েছিল প্রায় ১১ হাজার ৭০০ বছর আগে। এত দিন পর্যন্ত ভূপৃষ্টে এবং সমুদ্রতলে এই যুগের প্রভাব সব থেকে বেশি ছিল। কিন্তু ‘অ্যান্থ্রোপোসিন’ যুগের প্রভাব তার থেকেও বেশি বলে আশঙ্কা করছেন ভূতাত্ত্বিকেরা।
কানাডার অন্টারিয়ো প্রদেশের ক্রফোর্ড লেকের ওপর গবেষণা চালিয়ে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন ভূতাত্ত্বিকেরা। ৮০ ফুট গভীরতা ও ২৬ হাজার স্কয়ারের এ হ্রদটির পানি প্রায় স্বচ্ছ। এটির নিচে বছরের পর বছর ধরে যে পলিস্তর জমা হয়েছে সেটি থেকে সহজেই পৃথিবীর বয়স বুঝতে পারেন ভূতাত্ত্বিকেরা। তাদের মতে, এই হ্রদে প্রতি বছর পলির একটি করে স্পষ্ট স্তর জমা হয়। সেই স্তরগুলো বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, গত সাত দশক ধরে মানুষের কার্যকলাপ ভূপৃষ্ঠে এতটাই প্রভাব ফেলছে যে পৃথিবীতে একটি নতুন যুগের সৃষ্টি হয়েছে।
রসায়নে নোবেলজয়ী পল ক্রাটজেন ২০০২ সালে সাম্প্রতিক ভূতাত্ত্বিক সময়কালকে ‘মনুষ্য যুগ’ বলে অভিহিত করেন। এরপর ২০০৯ সালে এটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের একটি দল গভীর গবেষণা ও পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ভূ-স্তর বিশ্লেষণ করতে শুরু করে। এসব গবেষণায় কানাডার ক্রফোর্ড হ্রদের পলিস্তরে কিভাবে ও কবে থেকে মানুষের কার্যকলাপের প্রভাব পড়েছে তা উঠে আসে।
গবেষণায় বেরিয়ে আসে, নিউক্লিয়ারসহ নানা বর্জ্য এবং গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন পৃথিবীর বায়ু ও ভূস্তরকে আমূল পাল্টে দিচ্ছে। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, ১৯৫১ সাল থেকে এই পরিবর্তনের স্পষ্ট চিহ্ন ভূ-স্তরে রয়েছে। তাই ১৯৫১ সাল থেকে ‘অ্যান্থ্রোপোসিন’ যুগের সূচনা বলে ধরে নিয়েছেন তারা।
গত ১১ জুলাই বার্লিনে এক সম্মেলনে ভূতাত্ত্বিকরা ‘অ্যান্থ্রোপোসিন’ যুগ নিয়ে আলোচনা করেন। তারা একমত হয়েছেন যে মানুষের কার্যকলাপের নেতিবাচক প্রভাব জলবায়ু ও ভূ-স্তরের উপরে পড়েছে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এখন সেসব নেতিবাচক প্রভাব ভবিষ্যতে কিভাবে কমানো যায় সেদিকে নজর দেয়ার কথা জানান তারা।
মন্তব্য করুন