কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে প্রেম-বিয়ে, নাগরিকত্বের দাবি নারীর

ছবি : প্রতীকী
ছবি : প্রতীকী

মায়ের চিকিৎসা করাতে পরিবারের সাথে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে গিয়েছিলেন এক নারী। এরপর ওই রাজ্যেরই এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়, তারপর প্রেম ও বিয়ে। আর এবার ভারতে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য সেখানকার নাগরিকত্ব চাইলেন ওই নারী।

প্রেমে পড়া এবং শেষ পর্যন্ত বিয়ে করা ওই নারী বাংলাদেশের সিলেটের বাসিন্দা।

জানা যায়, চিকিৎসার জন্য ২০০৭ সালে আসামে যাওয়ার পর শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন ওই পরিবারের মেয়ে স্থানীয় এক যুবকের প্রেমে পড়েন। এরপর সেই প্রেমকে পরিণয় দিতে তাকে বিয়ে করে তিনি থেকে যান সেখানেই। কিন্তু বিয়ের পরও ভারতের নাগরিকত্ব পাননি সেই নারী। কেননা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ বেশ জটিল প্রক্রিয়ার একটি।

২০১৯ সালে বিজেপি সরকার হিন্দুসহ ৬টি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে নতুন একটি আইন নিয়ে আসে। সেই আইনের মাধ্যমে এবার ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন বাংলাদেশের ওই নারী।

সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানায়, মায়ের চিকিৎসার জন্য যখন ভারতে এসেছিলেন ওই নারী, তখন তার বয়স অনেকটাই কম ছিল। হাসপাতালেই তার সঙ্গে দেখা হয় আসামের বদরপুর শহরের এক যুবকের। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার প্রক্রিয়া অনেকটাই জটিল। সেই সময় সেই নারীকে সাহায্যের জন্য পরম মমতার হাত বাড়িয়ে দেয় ওই যুবক এবং পরিচ্য হওয়ার এক সময় তাদের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

নিজ দেশে ফিরে আসার সময় ঘনিয়ে আসলে সেই নারী প্রেমের কথা জানান পরিবারকে।

দুজনেই হিন্দু পরিবারের, তাই হিন্দু রীতি মেনে তাদের বিয়ে হয় এবং বাংলাদেশের নারী থেকে যান ভারতেই। পরবর্তীতে তাদের এক সন্তানও হয়। করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর শহরে স্বামীর সঙ্গে সুখে সংসার করছেন ওই নারী। কিন্তু ভারতের নাগরিক কখনোই হননি তিনি। এরই মধ্যে নতুন করে এনআরসি-র প্রক্রিয়া শুরু হয় আসামে। বহু মানুষের কাছে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল থেকে নোটিশ আসে। গোটা বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় আসামে। সমস্যায় পড়েন ওই নারী।

২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ পেশ করে বর্তমান সরকার। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, শিখ এবং পার্সি সম্প্রদায়ের মানুষেরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আইন পাস হলেও বহুদিন এর প্রণয়নবিধি প্রকাশ করেনি সরকার। এবছর মার্চ মাসে শেষমেষ সেই প্রণয়ন বিধি প্রকাশ হয়। তারপরেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন ওই নারী।

এপ্রিল মাসে আসামের বরাক উপত্যকার বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শরণার্থী এই আইনের মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যেই ছিলেন বদরপুরের ওই নারী। কিন্তু কিছুদিনের মধ্য়েই তিনি তার আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।

স্থানীয় আইনজীবীদের মতে, সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব দাবি করতে গেলে আবেদনকারীকে প্রথমে প্রমাণ করতে হয়, তিনি ধর্মীয় নির্যাতনের ফলে তার দেশ ছেড়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত বারোটা পর্যন্ত যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন, শুধু তারাই আবেদন করতে পারেন। ভারতে প্রবেশ করার পর এই দেশে থাকার প্রমাণও দিতে হয় এই আইনে নাগরিকত্ব চাইলে।

আইনজীবী তথা ফরেনার্স ট্রাইবুনালের বিচারক ধর্মানন্দ দেব জানান, গতবছর ভারতের নির্বাচন কমিশন আসামের বদরপুরের একটি অংশকে করিমগঞ্জ জেলা থেকে বাদ দিয়ে কাছাড়ের সঙ্গে জুড়ে দেয়।

তিনি বলেন, বদরপুরের ওই নারী প্রথমে করিমগঞ্জের বাসিন্দা হিসেবে আবেদন করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে দেখা যায় তার বাড়ি কাছাড় জেলার আওতায়। ফলে তিনি তার আবেদন প্রত্যাহার করে নেন এবং পরে ফের আবেদন করেন। তিনি বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছেন এবং তার পরিবারের লোকেরা সেখানেই থাকেন। ২০০৭ সাল থেকে এদেশেই রয়েছেন তিনি। ফলে সিএএ-তে আবেদনে প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে অসুবিধা হয়নি তার। এবার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রক্রিয়াটি এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা আশাবাদী শিগগিরই তিনি ভারতের নাগরিক হবেন।

ধর্মানন্দের মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রণয়নের বিধি কিছুটা অসম্পূর্ণ এবং জটিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে যারা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তারা সবাই সেই দেশের নথি সঙ্গে করে আনতে পারেননি। অথচ সিএএ-র বিধিতে বলা হয়েছে আবেদনকারীকে অন্তত এমন একটি নথি দেখাতেই হবে। হয়তো এই কারণেই অনেকে আবেদন করছেন না। আবার প্রক্রিয়াটি এতটাই জটিল, অনেকে তা সামাল দিতে পারেন না। আমরা স্বেচ্ছায় তাদের সাহায্য করছি এবং আমার হাত ধরে এখন পর্যন্ত নয়জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে একজন নাগরিকত্ব পেয়েছেন।

চলতি বছরের ১৪ আগস্ট শিলচর শহরের বাসিন্দা, ৫০ বছরের দোলন দাস প্রথম বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থী হিসেবে সিএএ-র মাধ্যমে ভারতের নাগরিকত্ব পান। তাকে পরবর্তীতে নিয়ে যাওয়া হয় গুয়াহাটি এবং সেখানে সরকারি কর্মকর্তারা তার হাতে নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট তুলে দেন। তার পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যও আবেদন করেছেন, তবে তাদের নথি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। দোলন দাসের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর আরো কয়েকজন সাহস করে আবেদন করেছেন।

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বাংলাদেশের ওই নারীর পরিবার কথা বললেও তারা পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তাদের আইনজীবী এখনই ওই নারীর নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ, নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি সই

রাকসু নির্বাচন : ৬ দাবি ছাত্রদলের

পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

সাজেক থেকে ক্যাম্পাসে ফেরা হলো না খুবি ছাত্রীর

ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ ৩৮ বাংলাদেশির সন্ধান মিলেছে

বিজিবির অভিযানে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার উদ্ধার

এশিয়া কাপে পাকিস্তানি ফিল্ডারের থ্রোয়ে আহত আম্পায়ার

‘ভুল করে মায়ের পাসপোর্ট নিয়ে জেদ্দায় যান পাইলট মুনতাসির’

শাহীনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সুপার ফোরে পাকিস্তান

সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ

১০

এশিয়া কাপে পাকিস্তান ওপেনারের লজ্জার রেকর্ড

১১

চট্টগ্রামে আ.লীগ কর্মীদের বাসা ভাড়া না দিতে মাইকিং

১২

ভারতে ‘মস্তিষ্কখেকো অ্যামিবা’ সংক্রমণে ১৯ জনের মৃত্যু

১৩

বনানীতে দুই শিসা বারে ডিএনসির অভিযান

১৪

বয়কটের হুমকি দিয়েও না করার কারণ জানালেন পিসিবি প্রধান

১৫

কর্মচারী দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা পরিচালনার অভিযোগ

১৬

শাহীন ঝড়ে বাঁচা-মরার ম্যাচে লড়াকু সংগ্রহ পাকিস্তানের

১৭

‘গোলাপী খালার’ পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

১৮

পরাজিত শক্তির সঙ্গে আঁতাতের রাজনীতি মঙ্গলজনক হবে না: নীরব

১৯

চট্টগ্রামে মার্কিন বিমান ও সেনা উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনার কারণ কী?

২০
X