কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৫, ০৮:৪১ এএম
আপডেট : ১০ জুন ২০২৫, ০৯:৩২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কেন বন্যপ্রাণী হত্যা করতে চায় কেরালাবাসী

বন্যপ্রাণী। ছবি : সংগৃহীত
বন্যপ্রাণী। ছবি : সংগৃহীত

সবুজ বনজঙ্গল ও জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত রাজ্য কেরালা। রাজ্যটিতে মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর সংঘাত ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে মানুষের প্রাণহানি, আঘাত, ফসল ধ্বংস এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। ফলে রাজ্যটিতে বন্যপ্রাণী হত্যায় বৈধতা দিতে আইন সংশোধনের আবেদন করা হয়েছে।

সোমবার (০৯ জুন) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যের এ সংকট মোকাবিলায় কেরালা সরকার ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণী (সুরক্ষা) আইন (ডব্লিউএলপিএ) সংশোধনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করছে। এতে মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য হুমকিস্বরূপ কিছু বন্যপ্রাণীকে নিয়ন্ত্রিতভাবে হত্যার আইনি বিধান চালু করার কথা বলা হয়েছে।

কেরালার বন ও বন্যপ্রাণী বিভাগকে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন পাওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনে বন্য শুকরের মতো প্রাণী, যারা জননিরাপত্তা ও জীবিকার জন্য হুমকি, তাদের হত্যার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মাতৃভূমির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন সচিবকে আইন সচিবের সঙ্গে পরামর্শ করে এই বিষয়ে একটি আইনি প্রস্তাব তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কেন কেরালা এই পরিবর্তন চায়? কেরালা ভৌগোলিকভাবে প্রায় ৩০ শতাংশ ভূমি বনাচ্ছাদিত। ফলে মানুষের বসতি বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের কাছাকাছি। দ্রুত নগরায়ণ, আবাসস্থলের অবক্ষয়, কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন এবং বন্যপ্রাণীর জনসংখ্যার আঞ্চলিক ওঠানামা মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাতকে তীব্র করেছে।

২০১৬-১৭ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত, সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বন্যপ্রাণীর আক্রমণে কেরালায় ৯১৯ জনের মৃত্যু এবং ৮ হাজার ৯৬৭ জন আহত হয়েছেন। রাজ্যের ৯৪১টি গ্রামীণ স্থানীয় সংস্থার মধ্যে ২৭৩টিকে মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাতের হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

কেন এই সংঘাত? মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত: হাতি, বাঘ, বন্য শূকর, ম্যাকাক বানর, ময়ূর এবং বাইসনের মতো প্রাণীদের সঙ্গে ঘন ঘন মুখোমুখি হওয়ায় মানুষের প্রাণহানি এবং সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে।

ফসলের ক্ষতি: হাতি এবং বন্য শুকরের মতো প্রাণীরা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে, যা কৃষকদের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলে।

জননিরাপত্তার উদ্বেগ: বানর এবং শজারু মতো প্রাণী মানুষের বসতিপ্রধান এলাকায় উপস্থিতি জননিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

বন্যপ্রাণী (সুরক্ষা) আইন, ১৯৭২ কী অনুমতি দেয়? ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণী (সুরক্ষা) আইন ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মূল ভিত্তি। এ আইনে বন্যপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ করে এবং প্রজাতি ও তাদের আবাসস্থলের সংরক্ষণ নিশ্চিত করে। এই আইনে হুমকিস্বরূপ প্রাণীদের মোকাবিলার বিধান রয়েছে, তবে প্রক্রিয়াটি ধীর এবং আমলাতান্ত্রিক।

কেন কেরালা বর্তমান আইনকে অপ্রতুল মনে করে? কেরালার মতে, বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনের কঠোর নিয়ম এবং কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাতের সময়োপযোগী সমাধানে বাধা দেয়। প্রধান বন্যপ্রাণী প্রহরীর একচেটিয়া কর্তৃত্ব বাধার সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়ানাডের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করা জীবনের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

২০২২ সালে কেরালা স্থানীয় সংস্থাগুলোকে ফসল ধ্বংসকারী বন্য শূকর মারতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত শুটার ব্যবহারের ক্ষমতা দেয়। কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত শুটারের অভাব এবং অবাস্তব নির্দেশিকা এই ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে।

রাজ্যের বনমন্ত্রী এ কে শশীন্দ্রন বলেন, বন্য শুকর মারার আগে তা গর্ভবতী কিনা পরীক্ষা করতে হবে। এমন অবাস্তব নির্দেশিকা উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের জীবনের জন্য হুমকি রোধে বন্যপ্রাণীর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কী কী চুক্তি-সমঝোতা স্মারক সই হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে

শিশুকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন

আফগানিস্তান-বাংলাদেশ সিরিজ চূড়ান্ত, জেনে নিন কবে কখন ম্যাচ

মুখ খুললেন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী

ইরানে অভিযান, ইসরায়েলসংশ্লিষ্ট ছয়জন নিহত

টানা বৃষ্টি কতদিন থাকবে, জানালেন আবহাওয়াবিদ

স্থায়ীভাবে সিনেমা থেকে সরে দাঁড়াবেন জলিল-বর্ষা দম্পতি

খোলা মাঠে ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত বৃদ্ধ

যুদ্ধ বন্ধে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা

যমুনা সেতুতে কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-পিকআপের সংঘর্ষ

১০

’৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয় দুবার সমাধান হয়েছে, দাবি ইসহাক দারের

১১

ক্রিকেটকে ‘গুডবাই’ বললেন একশর বেশি টেস্ট খেলা তারকা ক্রিকেটার

১২

শতকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চালকদের বিশ্রামাগার নিজেই বিশ্রামে

১৩

সপ্তাহে দুদিন ছুটিসহ রূপায়ণ গ্রুপে চাকরির সুযোগ

১৪

পুরো শরীর ‘প্লাস্টিকের তৈরি’ বলায় খেপে গেলেন মৌনি

১৫

ইনডোর গার্ডেনিং শুরু করতে বেছে নিন এই ৭ গাছ

১৬

বরখাস্ত এসআইকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

১৭

ছেলেদের কাছে ৪৯ রানে ধরাশায়ী হয়ে অলআউট মেয়েরা

১৮

চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

১৯

নতুন মাইলফলক / এমআইই পাথওয়েজের প্রথম এনসিইউকে গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি উদযাপন

২০
X