

চট্টগ্রামে মাদক বিক্রি বন্ধের প্রতিবাদী যুবক ইমন দাশের মৃত্যু হয়েছে। মাদক বিক্রেতাদের হামলায় ইমন দাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরিবারের দাবি, মোহরা ৫নং ওয়ার্ডজুড়ে মাদকের অভয়ারণ্য। যার নেতৃত্বে রয়েছে হানিফ বাহিনীর প্রধান হানিফ। তার বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন দফায় দফায়। পরে জামিনে কারামুক্ত হয়ে আবার জড়ান মাদক ব্যবসায়।
রোববার (৩০ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার সময় হানিফ বাহিনীর সক্রিয় সদস্যরা নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন মৌলভীবাজার এলাকা সংলগ্ন মরিয়ম ক্লাবের পাশে ইমন দাশকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত এবং ধারাল চাপাতি দিয়ে কোপায়।
পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে একদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ইমনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিউতে রেফার করেন চিকিৎসক। কিন্তু চমেক হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় গুরুতর আহত ইমনকে নগরীর আন্দরকিল্লাহ জেনারেল হাসপাতালের আইসিউ-২ এ স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দশ দিন চিকিৎসা দেওয়া ইমনের অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে জেনারেল হাসপাতাল থেকে চমেক হাসপাতালে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দুইদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ইমন দাশ।
নগরীর কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় লিগ্যাসি গার্মেন্টেস কর্মী ছিলেন নিহত ইমন দাশ। সদ্য বিয়ে করেছিলেন। তার একটি ছোট ভাই রয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন ইমন দাশ। তিনি পটিয়ার ১০নং ওয়ার্ড ধলঘাট ইউপির দশপাড়া কালু দাশের বাড়ির বাসিন্দা সাগর দাশের ছেলে।
বুধবার (০৩ ডিসেম্বর) ইমন দাশের ওপর হামলার ঘটনায় সাগর দাশ বাদী হয়ে নগরীর চান্দগাঁও থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, দুলাল মহাজনের ছেলে নয়ন মহাজনের সাথে ইমন দাশের পূর্ব বিরোধ ছিল। এর জেরে ৩০ নভেম্বর ইমন দাশ পূজার ফুলের জন্য বাসা থেকে বের হলে তাকে এলাপাতাড়ি ছুরিকাঘাত ও চাপাতি দিয়ে কোপানো হয়। এ সময় কিরণ, আবু হানিফ, মহিউদ্দীন শরীফ ও মো. নেজাম উপস্থিত ছিলেন।
তাদের হামলায় আমার ছেলে ইমন দাশের ডান হাতের তর্জনির আঙুল, দুই হাতের তালু, ঠোঁটের নিচে গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম এবং বাম পায়ের তর্জনি ও মধ্যমাঙুল কাটা জখম হয়। বিবাদীদের হাতে থাকা কিরিচ, চাপাতির বিপরীত অংশ দিয়ে আঘাত করে আমার ছেলের দুই হাতের কবজির উপরের অংশ ও ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে হাঢ়ভাঙা জখম হয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বিবাদীরা আমার ছেলেকে মারধর করে মাটিতে ফেলে আমার ছেলের বুক, গলা, পেটের উপর পা দিয়ে চেপে ধরে রাখে। এ ঘটনায় মামলা-মোকদ্দমা হলে আমাদের খুন করবে বলে হুমকি দেয়। এর আগে ইমন দাশকে বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
নিহত ইমন দাশের পিসি সুমি দাশ কালবেলাকে বলেন, ইমন মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিল। তার এলাকায় কোনো মাদক ব্যবসা চলবে না বলে মাদক ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দিয়েছিল। এলাকায় মাদক বিক্রেতারা হানিফ বাহিনীর সদস্য। তারা ভোরে ইমনের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ছুরিকাঘাত ও কিরিচ, চাপাতির কোপে রক্তাক্ত জখম করে। আমরা তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। একইসাথে বিসিক শিল্প এলাকা মাদকমুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের জোর দাবি জানাই।
এ বিষয়ে জানতে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদুল কবিরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে কল রিসিভ করেননি।
মন্তব্য করুন