ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পুরো নাম নরেন্দ্র দামোদারদাস মোদি। শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বের প্রভাবশালী নেতাদের অন্যতম তিনি। অথচ কৈশোরে যার অনেকটা সময় কেটেছে রেলস্টেশনে চা বিক্রি করে।
ভারত স্বাধীন হওয়ার তিন বছর পর অর্থাৎ ১৯৫০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গুজরাটের মেহসানা জেলার ভাদনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোদি। তার বাবা ছিলেন দামোদারদাস মোদি এবং মায়ের নাম হিরাবা মোদি। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বড় হয়েছেন। সেই অবস্থা থেকে তার উত্থান রূপকথাকেও হার মানায়।
স্কুলজীবনে ছাত্র হিসেবে ছিলেন মাঝারি মানের। তবে ছাত্রজীবনে ব্যাপক আগ্রহ ছিল বিতর্ক আর থিয়েটারে। যার প্রভাব তার রাজনৈতিক জীবনেও স্পষ্ট। কৈশোরে বাবাকে সাহায্য করতে রেল ক্যান্টিনে চা বিক্রি করেছেন তিনি। পরে যোগ দেন গুজরাট রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির ক্যান্টিনবয় হিসেবে। যদিও একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আট বছর বয়স থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মোদি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাওয়ার সময়ও তিনি আরএসএসের সঙ্গেই ছিলেন। ঘাঞ্চি সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী, ১৭ বছর বয়সেই যশোদাবেন নামের এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় মোদির। তবে সেই সংসার জীবন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে মোদির বিরুদ্ধে।
রাজনীতির একদম শীর্ষ পদে নরেন্দ্র মোদির আরোহণ বিস্মিত করে অনেককে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা শক্তিশালী কংগ্রেসকে হঠিয়ে ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন মোদি। যদিও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দীর্ঘদিনের। ১৯৮০ সালে বিজেপি গুজরাটে যোগ দেওয়ার আগে তিনি আরএসএসে প্রশিক্ষিত প্রচারক হিসেবে বহু বছর কাজ করেছেন। সুবক্তা, গোপনীয়তা রক্ষা ও দুর্দান্ত সংগঠক হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি ছিল তার। ২০০১ সালের জানুয়ারিতে ভূমিকম্পে গুজরাটে প্রায় ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় মোদির পূর্বসূরিরা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। ওই সময় রাজনীতির মাঠে বড় ধরনের সুযোগ পান নরেন্দ্র মোদি। বলা যায়, সেখান থেকেই তার রাজনৈতিক উত্থান শুরু।
২০০১ থেকে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত টানা চারবার তিনি বিজেপির প্রার্থী হিসেবে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ক্ষমতা নেওয়ার পরের বছরই অর্থাৎ ২০০২ সালে ধর্ম নিয়ে দাঙ্গা বাঁধে গুজরাটে। এতে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, যার অধিকাংশই মুসলিম। মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি দাঙ্গায় উসকানি দেন। সেই সময় তিনি চরমভাবে নিন্দিত হন। তবে বরাবরই দাঙ্গায় তার ভূমিকা নিয়ে যত অভিযোগ ওঠে তার সবই অস্বীকার করে আসছেন তিনি। আদালতও তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
সবকিছু ছাপিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিশ্বনেতাদের তালিকায় ৭২ বছর বয়সী মোদি এ বছরও উঠে আসেন শীর্ষে। তার কূটনৈতিক মুন্সিআনায় আমেরিকা এবং রাশিয়ার সঙ্গে সমানে সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে ভারত।
মন্তব্য করুন