এক বছর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা, গয়না আর বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। উদ্ধারের পর ২০০০ এবং ৫০০ টাকার সেই সব নোট মেশিনে গুনে, ট্রাঙ্কের পর ট্রাঙ্কে ভরে নিয়ে গিয়েছিল ইডি। এখন কোথায় আছে সেই বিপুল নগদ টাকা? এদিকে আগস্ট মাসের মধ্যে বাজার চলতি ২ হাজার টাকার সব নোট ব্যাংকে জমা করার নির্দেশ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক।
শনিবার (২২ জুলাই) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের ২২ জুলাই টালিগঞ্জের ‘ডায়মন্ড সিটি’ আবাসনে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে নগদ ২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করে ইডি। একই সঙ্গে উদ্ধার হয় প্রচুর বিদেশি মুদ্রা এবং সোনার গয়নাও। এরপরে ২৭ জুলাই বেলঘরিয়ার ‘ক্লাব টাউন হাইট্স’ আবাসনে অর্পিতার নামে থাকা দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে মোট ২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা নগদে উদ্ধার করে ইডি। সঙ্গে প্রচুর টাকার গয়না।
ইডি সূত্রেই জানা গেছে, গত এক বছর ধরে ওই টাকার গুছিয়ে রাখেছে কলকাতার অফিসে। রাখা আছে রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের ভল্টে। সোনার গয়না, বিদেশি মুদ্রাও রয়েছে সেখানেই। আর সেই সংক্রান্ত নথিপত্র রয়েছে এই মামলার নির্দিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তার হেফাজতে।
চার্জশিটে ইডির দাবি, পার্থ-অর্পিতার নগদ টাকা, গয়নাসহ প্রায় ১০৩.১০ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। সে সবের খতিয়ান আদালতে জমা করা হয়েছে।
ইডির কর্মকর্তাদের দাবি, যতদিন মামলা চলবে, ততদিন ওই টাকা-গয়না ওইভাবেই সযত্নে রাখা থাকবে। এ ছাড়া অন্যান্য নথিপত্রও গুছিয়ে রাখা হবে । কারণ দুর্নীতি মামলায় এই সব খতিয়ান হচ্ছে এক একটা প্রমাণ।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা যায়, বিচারপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বা আদালত বিশেষ কোনও নির্দেশ না দিলে অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া ওই টাকায় হাত দেওয়া যাবে না। আপাতত টাকাগুলো ব্যাংকেই ভল্টবন্দি হয়ে থাকবে।
ইডির এক প্রাক্তন আইনজীবী বলেন, তদন্তকারী সংস্থা নিজেদের হেফাজতে সবকিছু নিতে চায়। কারণ অন্যের সম্পত্তি বেশি দিন ওই ভাবে নিজেদের কাছে রাখতে পারে না কেউ।
তিনি আরও বলেন, আঞ্চলিকভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’ এর নামে কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাকাউন্ট থাকে। সেই অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন ইডির বিভিন্ন আঞ্চলিকপ্রধানরা। ওই ব্যাংকের ভল্টে উদ্ধার হওয়া টাকা-গয়না রাখা থাকে। অন্যান্য নথি থাকে তদন্তকারী আধিকারিকের হেফাজতে। সেই সব নথি পর্যবেক্ষণ করে তদন্তের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রাক্তন ইডি কর্মকর্তা অনুপ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, অভিযুক্তের হেফাজত থেকে যেসব জিনিস উদ্ধার হয় আইনগতভাবে সেগুলো তার সম্পত্তি বলেই বিবেচ্য হয়। তবে অভিযুক্ত যদি আদালতে উপযুক্ত নথি পেশ করে সেগুলোর মালিকানা প্রমাণ করতে না পারেন তাহলে মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর ওই নগদ টাকা-গয়না সরকারের সম্পত্তি বলে বিবেচিত হবে। পরে তা কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে জমা হবে।
এদিকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক কয়েক মাস আগেই নির্দেশিকা জারি করেছে যে, বাজারে থাকা সব ২ হাজার টাকার নোট ব্যাংকে জমা দিয়ে দিতে হবে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে। সেই হিসেবে উদ্ধার হওয়া ২ হাজার টাকাগুলো ভবিষ্যৎ কী, এ বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাংক কিছু বলেনি।
অনুপের মতে, প্রমাণ হিসাবে ভল্ট বা হেফাজতে থাকা টাকা কোনোভাবেই নষ্ট, ধ্বংস করা বা পাল্টানো যায় না। এ ক্ষেত্রে ২ হাজার টাকার নোট ইডি হেফাজতেই রেখে দিতে হবে। পাল্টানো যাবে না। আরও একটা কথা মনে রাখতে হবে, এটা নোটবন্দি নয়। রিজার্ভ ব্যাংক বাজার থেকে ২ হাজার টাকার নোট শুধু জমা করতে বলেছে। বাতিল হয়ে গিয়েছে, তা বলেনি। আর বিচারপ্রক্রিয়া শেষে এই নোট কোনোভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পত্তি হলে তখন তারা সেটা বুঝে নেবে। ফেরত দেওয়ার বিষয়টাও তাদের হাতেই।
মন্তব্য করুন