শুক্রবার, ২৯ আগস্ট ২০২৫, ১৪ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইসরায়েলের দেওয়া টি-শার্ট পোড়ালেন মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিরা

ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়ার আগে এই টি-শার্ট পরানো হয়। ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়ার আগে এই টি-শার্ট পরানো হয়। ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১৫ ফেব্রুয়ারি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তিন ইসরায়েলি নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েল ৩৬৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।

তবে, মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের পরানো হয় ‘বিশেষ টি-শার্ট’, যা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল। যা নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

এই টি-শার্টের উপর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ একটি চিহ্ন ব্যবহার করেছে, যা ফিলিস্তিনিরা অপমানজনক হিসেবে অনুভব করেন। বন্দিরা নিজ ভূমিতে ফিরে এই টি-শার্টে আগুন ধরিয়ে দেন, যা একটি প্রতিবাদ হিসেবেই দেখা হয়।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের পরানো টি-শার্টে ছিল ‘স্টার অব ডেভিড’ লোগো। এই চিহ্নটি ইসরায়েলি জাতির একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে পরিচিত, যা ঈশ্বর, ইসরায়েল এবং তাওরাতের মধ্যে সংযোগের প্রতিনিধিত্ব করে।

ইসরায়েলের জাতীয় পতাকার মাঝখানে এই চিহ্ন থাকে। তবে, বন্দিদের পরানো টি-শার্টে এর সঙ্গে একটি আরবি স্লোগান ছিল- ‘আমরা ভুলব না বা ক্ষমা করব না।’ ফিলিস্তিনিরা এই স্লোগানকে অত্যন্ত অপমানজনক এবং তাদের জাতিগত ও ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি আঘাত বলে মনে করেন।

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের পর মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। অনেক বন্দি তাদের মুক্তির পর এই টি-শার্ট আড়াল করার চেষ্টা করেন, আবার কিছু বন্দি নিজ ভূমিতে ফিরে ওই টি-শার্টে আগুন ধরিয়ে দেন।

গাজার খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান গাজা হাসপাতালে মুক্তি পাওয়া কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে দেখা যায়, যেখানে তারা ওই টি-শার্ট পুড়িয়ে ফেলছেন। এই ঘটনা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হয় এবং তারা ইসরায়েলি আচরণকে ‘বর্ণবাদী অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

এই ঘটনার পর হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের আচরণকে তীব্রভাবে নিন্দা করেছে। হামাস তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিনির গায়ে বর্ণবাদী স্লোগান চাপিয়ে দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ মানবিক আইন-রীতিনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন।

তারা আরও জানায় যে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের অপরাধের জন্য কঠোর সমালোচনার যোগ্য। ইসলামিক জিহাদও একইভাবে এই আচরণকে ‘বর্ণবাদী অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

কাতারের দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মিডিয়া স্টাডিজ প্রোগ্রামের অধ্যাপক মোহাম্মদ এলমাসরি আল-জাজিরাকে বলেন, এটি ইসরায়েলিদের আরেকটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনিদের মানবীয় গুণাবলিকে হরণ করতে চায়।

তিনি উল্লেখ করেন, ফিলিস্তিনিরা যে মানবিক গুণাবলী এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে, তা নষ্ট করতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অপমানজনক পদক্ষেপ নিয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রসও এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রেড ক্রস এই বন্দি-জিম্মি বিনিময়ের মাধ্যমে ইসরায়েল এবং হামাসের প্রতি ‘মর্যাদা’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।

সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের মানবিক সংকটের সময় সব পক্ষকে মানবিক আইন মেনে চলতে হবে, যাতে বন্দিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা যায় এবং যুদ্ধবিরতির শর্ত পালন করা হয়।

গত মাসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়, যা গাজা উপত্যকায় ব্যাপক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর শান্তির প্রক্রিয়াকে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে আসে। রেড ক্রসের তথ্যানুসারে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইতোমধ্যে হামাস ২৪ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে এবং ইসরায়েল ৯৮৫ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এই বন্দি-জিম্মি বিনিময়ের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে কিছুটা শান্তির আশা তৈরি হয়েছে, তবে ফিলিস্তিনিরা তাদের জাতিগত অপমান ও অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের এই ‘অপমানজনক’ আচরণকে গভীর ক্ষুব্ধভাবে গ্রহণ করেছে এবং তাদের স্বাধীনতার আন্দোলনে এটি এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ ঘটনার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী প্রতিবাদ ও আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারে, যা আন্তর্জাতিকভাবে আরও বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইতালিতে ‘ও লেভেল’ পরীক্ষায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অভাবনীয় সাফল্য

সাবেক এমপি বুলবুলের পিএস সিকদার লিটন গ্রেপ্তার

টাকা না পেয়ে ফুপুকে গলাকেটে হত্যা করল ভাতিজা

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে নারীদের জন্য বিশেষ কোটা বাতিল 

আন্তর্জাতিক ফেলোশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন ছাত্রদলের ঊর্মি

স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের মায়ের মৃত্যুতে প্রেস ক্লাবের শোক

প্রকৌশলীদের মর্যাদা রক্ষায় আইইবি’র ৫ দফা দাবি

পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাই

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের লিগপর্বের ড্র অনুষ্ঠিত, রিয়াল-বার্সার প্রতিপক্ষ কারা?

১০

সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিওটি ভুয়া

১১

আজীবন থাকা, কাজ ও ব্যবসার সুযোগ দেবে সৌদি, কত টাকা লাগবে

১২

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

১৩

এবার যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের 

১৪

ফিফা কোয়ালিফায়ারে শেষবারের মতো নামছেন মেসি, জানালেন নিজেই

১৫

অপারেশন থিয়েটারে রোগীকে রেখে স্বাস্থ্যকর্মীর টিকটক, অতঃপর...

১৬

গকসু নির্বাচন : রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়ন বিতরণ 

১৭

চট্টগ্রামে হবে আইইসিসি মাল্টিডেস্টিনেশন এডুকেশন এক্সপো 

১৮

চব্বিশের বিজয়ীদের কার্যকলাপে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ : কাদের সিদ্দিকী

১৯

ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে হামলার আশঙ্কা নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

২০
X