কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
গাজা যুদ্ধ

এতিম শিশুর দায়িত্ব নিলেন ২৩ বছরের নিঃসন্তান দম্পতি

রামি ও তার স্ত্রী ইমান দত্তক নেওয়া শিশু জান্নাতের সঙ্গে। ছবি : সংগৃহীত।
রামি ও তার স্ত্রী ইমান দত্তক নেওয়া শিশু জান্নাতের সঙ্গে। ছবি : সংগৃহীত।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার ধ্বংসযজ্ঞের ভেতরেও কিছু মানুষ আশার আলো ছড়াচ্ছেন। তারা সেই শিশুদের আগলে নিচ্ছেন, যারা এক মুহূর্তেই মা-বাবা, পরিবার- সব হারিয়েছে।

এই ভয়াবহ যুদ্ধের শিকার হয়ে হাজারো শিশু এখন অনাথ, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ডুবে আছে। কিন্তু মানবিক হৃদয়ের কিছু মানুষ এসব শিশুকে নতুন জীবন দিতে এগিয়ে এসেছেন।

রামি ও আবির আরোকি, এক দম্পতি যারা দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নিঃসন্তান ছিলেন। বহু বছর ধরে সন্তান নেওয়ার আশা করেও সফল হননি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে পাওয়া এক এতিম শিশুই তাদের স্বপ্ন পূরণ করল।

একদিন তাদের এক পরিচিত নার্স জানান, হাসপাতালে মাত্র দুই মাস বয়সী শিশু আছে, যে একাই বেঁচে গেছে, কিন্তু তার মা-বাবার কোনো খোঁজ নেই। ইসরায়েলি হামলা তার পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।

শিশুটির জন্য কেউ নেই- এই খবর শোনার পর রামি ও আবির সিদ্ধান্ত নেন, তারা শিশুটিকে দত্তক নেবেন। গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে তারা শিশুটিকে গ্রহণ করেন এবং নাম রাখেন জান্নাত।

রামি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, জান্নাত শুধু আমাদের দত্তক নেওয়া সন্তান নয়, সে আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার।

এতিম শিশু নিয়ে আরও একটি হৃদয়স্পর্শী ঘটনা ঘটেছে উপত্যকার আল-শিফা হাসপাতালে। ৩৪ বছর বয়সী নার্স আমাল ইসমাইল হাসপাতালে কাজ করার সময় দেখতে পান, ৩০টি নবজাতক যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে একটি শিশুর কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই।

শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য মিসরে পাঠানোর কথা ওঠে, কিন্তু বাবা-মা ছাড়া তাকে কেউ নিতে রাজি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে প্রায় ৫০ জন লোক শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ দেখান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের পরিচালক নার্স ইসমাইলকেই দায়িত্ব দেন। তিনি শিশুটির নাম রাখেন মালাক, যার অর্থ ‘পরী’। কারণ হাসপাতালের সবাই শিশুটিকে ‘অজ্ঞাত’ বলে ডাকছিল।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে ১৭ হাজারেরও বেশি শিশু এতিম হয়ে গেছে। যুদ্ধে হারানো এই শিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেছে। অনেক শিশু না খেয়ে আছে, চিকিৎসা পাচ্ছে না, ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই শিশুদের নতুন করে আশ্রয় দেওয়া এবং তাদের মানসিক ও শারীরিক যত্ন নেওয়া এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সংকটের মধ্যে রামি-আবির, আমাল ইসমাইলের মতো মানুষরা এগিয়ে এসে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।

গাজা উপত্যকার প্রতিটি ধ্বংসস্তূপ, প্রতিটি আশ্রয়শিবির আজ এতিম শিশুদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে। শিশুদের খেলাধুলার সময়, শিক্ষার সময়, কিন্তু তাদের দিন কাটছে ভয়, ক্ষুধা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে।

বিশ্ব নেতাদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় অনুরোধ- এই শিশুদের রক্ষা করতে হবে, তাদের নিরাপদ ভবিষ্যৎ দিতে হবে। গাজার হাজার হাজার শিশুর জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব।

এই যুদ্ধ থামাতে হবে, কারণ শিশুরা কখনোই যুদ্ধের পক্ষ নেয় না, কিন্তু তারাই সবচেয়ে বেশি শিকার হয়।

সূত্র : মিডল ইস্ট আই

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যে কারণে ক্ষমা চাইলেন বাফুফে সভাপতি

গাজায় সেনা পাঠানো নিয়ে নতুন সংকটে পাকিস্তান

তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ৬১ ক্রিকেট ব্যাট-বল বিতরণ

ভূমিকম্পে আহত হামীমের চিকিৎসার খোঁজ নিলেন ডা. কাঁকন

৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা

খালেদা জিয়ার হাসপাতালে ভর্তির কারণ জানালেন চিকিৎসক

ফাইনালে সুপার ওভারে হেরে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ

বিদেশিদের হাতে বন্দরের ব্যবস্থাপনা তুলে দেওয়া অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত : লায়ন ফারুক

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় / পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় মেজর সিনহাকে

কর্মী নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশকে সুখবর দিল সৌদি আরব

১০

সোনালী ব্যাংকে ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ দিয়ে প্রতারণা

১১

জাল টাকার নোটসহ আটক ২

১২

রাজশাহীতে ৬ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

১৩

এসএ সিদ্দিক সাজুকে বিএনপির শোকজ

১৪

বিএনপি নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বিতা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ : সেলিমা রহমান

১৫

মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমী গ্রেপ্তার

১৬

রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত : রিজভী

১৭

যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় হামলা, কমান্ডারকে নিহতের দাবি ইসরায়েলের

১৮

রাবির দুই শিক্ষককে বিভাগীয় সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি

১৯

এ দেশ সবার, কারো একার না : সালাউদ্দিন বাবু

২০
X