ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান সামরিক আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় ১২০০ সাবেক ও বর্তমান রিজার্ভ সেনা কর্মকর্তা।
সম্প্রতি সরকার ও সেনাপ্রধান বরাবর পাঠানো এক খোলা চিঠিতে তারা এই আহ্বান জানান। মঙ্গলবার (২৭ মে) ইসরায়েলের প্রভাবশালী পত্রিকা হারেৎজ তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে চিঠির বিষয়বস্তু নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ইসরায়েলি সেনারা দাবি করেছেন, গাজায় এই দীর্ঘমেয়াদি অভিযান এখন আর ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক কৌশলে পরিণত হয়েছে- যা দেশের জনগণের বৃহৎ অংশের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে।
চিঠিতে বলা হয়, আমরা সাবেক ও বর্তমান রিজার্ভ অফিসার ও কমান্ডাররা এই রাজনৈতিক যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে, আমরা সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি যেন অবিলম্বে সব ইসরায়েলি জিম্মির নিরাপদে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা হয়। এই চিঠিতে সেনার সতর্ক করেছেন, চলমান অভিযান কেবল জিম্মি নয়, ইসরায়েলি সেনা ও নিরীহ বেসামরিক মানুষদের জীবনকেও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এই যুদ্ধ কেবল নৈতিকভাবেই অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং এটি ইসরায়েলের সামরিক স্বার্থকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে তা যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের দিকে গড়াতে পারে, যা ইসরায়েলের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।
গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে একই দাবি নিয়ে সরকার ও সামরিক বাহিনীর উদ্দেশে আরেকটি খোলা চিঠি দিয়েছিলেন সহস্রাধিক রিজার্ভ সেনা। একইসঙ্গে একটি স্বাক্ষর অভিযানে পাঁচ দিনের ব্যবধানে অংশ নিয়েছেন এক লাখেরও বেশি ইসরায়েলি নাগরিক।
এদিকে গাজায় চলমান মানবিক সংকটের দ্রুত সমাধানে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস ও ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেত্তেরি অর্পো। গত মঙ্গলবার (২৭ মে) হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত এক যৌথ আলোচনায় তারা ইসরায়েলের প্রতি গাজায় জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, প্রায় ২০ মাস ধরে গাজায় সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত কয়েক সপ্তাহে তা আরও তীব্র হয়েছে। প্রায় ১১ সপ্তাহ ধরে অঞ্চলটিতে কার্যত ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ। সীমিত পরিসরে কিছু ত্রাণ ঢুকলেও তা অধিকাংশ ফিলিস্তিনির নাগালে পৌঁছাচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা ইসরায়েলের এই বর্বর আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে আসছেন।
চলমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনাদের এই অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি প্রমাণ করে, দেশের ভেতর থেকেও গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে-কেবল নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, কৌশলগত দিক থেকেও।
মন্তব্য করুন