বিয়ের আগেই সম্পত্তি ভাগাভাগির চুক্তি করছে আরবরা। কনে-বরের মধ্যে এ নিয়ে বনিবনা হলে তবেই সম্পর্ক বিয়েতে গড়াচ্ছে। এ ধরনের কার্যকলাপ আরবে অনেক আগে থেকে চললেও সম্প্রতি তা বেড়েছে।
খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে এখন আরও বেশি দম্পতি বিয়ের আগে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হিসেবে প্রিন্যাপচুয়াল চুক্তি (প্রিনাপ) বেছে নিচ্ছেন। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) এটি বেশি দেখা যাচ্ছে। যেখানে আইনি সংস্কারের ফলে এই চুক্তিগুলো খসড়া করা, স্বীকৃতি দেওয়া এবং আইন প্রয়োগ করা সহজতর হয়েছে। যদিও প্রিনাপ বিয়ের ভাঙন রোধ করতে পারে কি না তা প্রমাণিত নয়। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি প্রায়ই বিবাহবিচ্ছেদের পরে উদ্ভূত তিক্ততা এবং আইনি জটিলতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
বিবাহপূর্ব চুক্তি (প্রিন্যাপচুয়াল চুক্তি) হলো- বিয়ের আগে দম্পতিদের দ্বারা সম্পাদিত একটি আইনত বাধ্যতামূলক চুক্তি, যা বিবাহবিচ্ছেদ বা মৃত্যুর ক্ষেত্রে তাদের সম্পদ এবং ঋণ কীভাবে ভাগ করা হবে তা বর্ণনা করে। এটি বিবাহে প্রতিটি সঙ্গীর আইনি অধিকারগুলো স্পষ্ট করে। যার মধ্যে সম্পদ, ঋণ এবং উত্তরাধিকার কীভাবে পরিচালনা করতে হয় তাও অন্তর্ভুক্ত।
আরবে এ চুক্তির টার্নিং পয়েন্ট এসেছিল ২০২১ সালে। তখন আবুধাবি অ-মুসলিম বিদেশিদের জন্য ব্যক্তিগত অবস্থা সংক্রান্ত আইন প্রবর্তন করে। এরপর ২০২২ সালে রেজোলিউশন নং-৮ এর মাধ্যমে নাগরিক বিয়ের জন্য একটি আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো অ-মুসলিম দম্পতিরা যাদের বেশিরভাগই প্রবাসী তারা ধর্মীয় আইনের বাইরে নাগরিক চুক্তির অধীনে বিয়ে করতে পারেন।
বিএসএ আইন সংস্থার সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট টাইন হুগো ব্যাখ্যা করে বলেন, আরবরা বিয়ের আগে প্রিন্যাপচুয়াল চুক্তি স্বাক্ষরের সুযোগ দেয়। দম্পতিরা এখন শুরু থেকেই তাদের আর্থিক ব্যবস্থা কাস্টমাইজ করার সুযোগ পাচ্ছেন, যা আগে পাওয়া যেত না বা আইনগতভাবে অস্পষ্ট ছিল।
ইউএইতে লাখ লাখ প্রবাসী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পটভূমি থেকে এসে একত্রে বসবাস করেন। তাদের অনেকে কাজ শেষে নিজ দেশে ফিরে যান। আরব কর্মকর্তারা ক্রমশ দেশটিকে কেবল একটি অস্থায়ী গন্তব্য নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি বাসস্থান হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন। বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে হলে ইউএইকে তাদের সাংস্কৃতিক রীতিনীতির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রিনাপ কেবল সাধারণই নয় বরং প্রত্যাশিত। তাই আরব প্রশাসনও বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এ ধরনের সুযোগ দিচ্ছে।
যদিও কিছু পরিবারে এটি এখনো অস্বস্তিকর বিষয় তবে প্রিনাপকে আর বিয়ের জন্য হুমকি হিসেবে না দেখে স্বচ্ছতা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
প্রিনাপ কেবল বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সম্পদ কীভাবে ভাগ করা হবে তা নির্ধারণ করে না; এটি বিয়ের সময় সম্পদ কীভাবে ব্যয় হবে তাও নির্দিষ্ট করতে পারে। সঙ্গীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, তাদের সম্পত্তি যৌথ বা পৃথক হবে এবং কীভাবে একে অপরের আর্থিক দায় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। যেমন- যদি স্বামী বা স্ত্রী ঋণে পড়েন তবে অন্যজন তার সম্পদ নিয়ে নিশ্চিত থাকবেন। কারণ, চুক্তি অনুযায়ী একজনের ঋণ অন্যজনকে পরিশোধ করতে হবে না।
মন্তব্য করুন