কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম
আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ০৬:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে ১০ দেশের প্রতিক্রিয়া

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তাল আকাশে এবার যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানের গর্জন, ইরান-ইসরায়েলের রক্তঝরা সংঘাতে অবশেষে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে ট্রাম্প প্রশাসন।

স্থানীয় সময় শনিবার (২১ জুন) মধ্যরাতে ইসরায়েলের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে ইরানের ৩টি উচ্চ-নিরাপত্তা সম্পন্ন পারমাণবিক স্থাপনায় তীব্র বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে এই হামলা কেবল একটি নতুন সামরিক অভিযান নয়- এটি বিশ্বরাজনীতির ভারসাম্যে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত। লক্ষ্যবস্তু ছিল ইরানের ফোর্ডো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্র, যেগুলো তেহরানের কৌশলগত অস্তিত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলা ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করেছে। তিনি আরও হুমকি দিয়েছেন, ‘যদি ইরান শান্তি স্থাপনে অগ্রসর না হয়, তাহলে আরও হামলা হবে।’ তার এই পদক্ষেপে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আরও গভীর ও বিপজ্জনক রূপ নেওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এই ঘটনার পরপরই বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জাতিসংঘসহ অন্তত ১০টি দেশের সরকার এবং আঞ্চলিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে এ হামলা নিয়ে উদ্বেগ, সমর্থন ও নিন্দা প্রকাশ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ : ‘একটি বিপজ্জনক মোড়’

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হামলার পর এক বিবৃতিতে বলেন, আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মধ্যপ্রাচ্যে এমনিতেই উত্তেজনা চরমে, তার ওপর এই হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। তিনি বলেন, এই সংঘাত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যার ফল ভোগ করতে হবে বেসামরিক মানুষ, অঞ্চল এবং পুরো বিশ্বকে।

১. ইরান : ‘আমরা সব পথ খোলা রাখছি’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। ইরান তার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলাকে ‘বেপরোয়া ও অপরাধমূলক’ আখ্যা দেন এবং বলেন, ‘ইরান প্রতিরোধে প্রস্তুত।’

২. ইসরায়েল : ‘ইতিহাস গড়েছেন ট্রাম্প’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই সাহসী সিদ্ধান্ত ইতিহাস বদলে দেবে। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শাসককে সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র থেকে দূরে রেখেছেন।’

৩. সৌদি আরব : ‘উদ্বেগজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত’

সৌদি আরব এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা ইরানে পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এই মুহূর্তে সকল পক্ষকে সংযম ও শান্তির পথ অনুসরণ করতে হবে। তারা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

৪. কাতার : ‘বিপর্যয়ের আশঙ্কা’

কাতার বলেছে, এই হামলা গোটা অঞ্চলজুড়ে বিপর্যয়কর পরিণতি বয়ে আনতে পারে। তারা সব পক্ষকে বিবেচনার সাথে এবং আরও কোনো উত্তেজনাকর পদক্ষেপ না নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।

৫. ওমান : ‘সংঘাত বন্ধে সংলাপ জরুরি’

মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা আমরা তীব্রভাবে নিন্দা করছি। এটি সরাসরি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তারা সংলাপের মাধ্যমে সমাধান খোঁজার ওপর জোর দিয়েছে।

৬. যুক্তরাজ্য : ‘কূটনীতি চাই, যুদ্ধ নয়’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বিশ্বের জন্য হুমকি, তবে একতরফা সামরিক হামলা নয়, সমাধানের পথ হতে হবে কূটনৈতিক। তিনি ইরানকে পুনরায় আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানান।

৭. চীন : ‘ইরাকের ভুল পুনরাবৃত্তি?’

চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিজিটিএন মন্তব্য করেছে, যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও ইরাকে করা ভুল ইরানে পুনরাবৃত্তি করছে? তারা সতর্ক করে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক হস্তক্ষেপ অতীতে শুধু দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত ও অস্থিতিশীলতাই ডেকে এনেছে।

৮. ভেনেজুয়েলা : ‘সরাসরি আগ্রাসন’

ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ভান গিল এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। এটি একটি সরাসরি আগ্রাসন, যা বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি।

৯. অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড : শান্তির আহ্বান

অস্ট্রেলিয়া বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল। আমরা সব পক্ষকে সংযম ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই। নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না। সংলাপই একমাত্র টেকসই সমাধান।

১০. মেক্সিকো ও চিলি : ‘আইনের শাসনের অবমাননা’

চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিক বলেন, ক্ষমতা থাকলেই তা অপব্যবহারের অধিকার দেওয়া হয় না। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন করেছে। মেক্সিকোও শান্তিপূর্ণ সমাধান ও কূটনৈতিক উদ্যোগকে সামনে আনার আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া এ সংকটের জটিলতাকেই তুলে ধরেছে।

একদিকে যেমন কিছু দেশ এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছে, অন্যদিকে অধিকাংশ দেশ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সময় সকল পক্ষের সংযমের পরিচয় দেওয়ার। কারণ এই সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তার প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা বিশ্বে।

সূত্র : আল জাজিরা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাকসু নির্বাচনের প্রচারে এগিয়ে ছাত্রদলের প্যানেল

জনপ্রশাসনের এপিডি এরফানুল হককে বদলি

কর্ণফুলীর তীরে নতুন আশা

চাকসু নির্বাচনে আরও তিন প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

সিলেট বিমানবন্দরে বিদ্যুৎস্পর্শে যুবকের মৃত্যু, থানায় মামলা

বৃষ্টি আর কতদিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

আগে টাইফয়েড টিকা গ্রহণকারীরা কি আবার নিতে পারবে?

বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামছেন সাবেক মেয়র আরিফ

পরাজয়ে কার্যত শেষ বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ আশা

ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার ৮ বছরে কারাদণ্ড

১০

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র পাল্লা থেকে ‘সব সীমা’ তুলে নিলেন খামেনি!

১১

ইমো হ্যাকিং চক্রের ১২ সদস্য আটক

১২

ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি নেতা মোস্তফা জামানের উঠান বৈঠক

১৩

শতাধিক সনাতনী যোগ দিলেন বিএনপিতে

১৪

উপদেষ্টা পরিষদে ১১ অধ্যাদেশ ও ৩ প্রস্তাব অনুমোদন

১৫

আলোচিত শুটার লালন গ্রেপ্তার

১৬

ঢাকা-১৮ আসনের উন্নয়নে কাজ করতে চান কফিল উদ্দিন

১৭

‘গাজায় স্থায়ী স্বস্তি ফিরে আসুক’

১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সব মামলা বাতিল হচ্ছে, আসামিরা পাচ্ছেন দায়মুক্তি

১৯

তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর রাষ্ট্র পরিচালিত হবে : তানভীর

২০
X