ইরানের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর বিশ্বজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে ‘সামরিক সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করলেও অনেক দেশ একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও বিপজ্জনক উত্তেজনার সূচনা বলে মন্তব্য করেছে।
হামলার পক্ষে কথা বলেছে ইসরায়েল, আর কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে ইরান, রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা, কাতার, কিউবা ও আরও কয়েকটি দেশ। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্বনেতারাও।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে স্বাগত জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। টেলিভিশন ভাষণে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিবাদন জানিয়েছেন। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায়সঙ্গত ও শক্তিশালী পদক্ষেপ ইতিহাস বদলে দেবে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শাসনব্যবস্থাকে সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র থেকে বঞ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।’
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি (এক্স-এ)
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একজন স্থায়ী সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (NPT) মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করেছে। শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা গভীরভাবে নিন্দনীয় এবং এর দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি থাকবে। প্রতিটি জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রের এই বিপজ্জনক, বেআইনি ও অপরাধমূলক আচরণে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। জাতিসংঘ সনদের আত্মরক্ষার অধিকার অনুসারে, ইরান তার সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ ও জনগণ রক্ষার জন্য সব ধরনের বিকল্প সংরক্ষণ করে।’
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন (এক্স-এ)
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন এক এক্স পোন্টে বলেন, ‘ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে—এখন আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান। এই সংকট সমাধানের জন্য এখনই ইরানকে একটি বিশ্বাসযোগ্য কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে হবে। আলোচনার টেবিলই একমাত্র সমাধান।’
রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপপ্রধান (টেলিগ্রামে)
ইরানে পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ। টেলিগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘যিনি শান্তির দূত হিসেবে এসেছিলেন, সেই ট্রাম্প এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরেকটি নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন। এ ধরনের সাফল্য নিয়ে তিনি কোনোদিন নোবেল শান্তি পুরস্কার জিততে পারবেন না।’
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল বারো (এক্স-এ)
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল বারো এক এক্স পোস্টে বলেছেন, ‘ফ্রান্স বিশ্বাস করে, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান শুধু পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির (NPT) কাঠামোর মধ্যে থেকে আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার
ইরানে পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর সংবাদ সম্মেলন করে বিবৃতি দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি। ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া যাবে না, আর যুক্তরাষ্ট্র সেই হুমকি প্রশমনে পদক্ষেপ নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। আমরা ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরে এসে সংকট নিরসনে কূটনৈতিক সমাধান গ্রহণের আহ্বান জানাই।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এটি এমন এক অঞ্চলে বিপজ্জনক উত্তেজনার চরম বহিঃপ্রকাশ, যা ইতোমধ্যে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই সংঘাত খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে—যার ভয়াবহ পরিণতি বেসামরিক মানুষ, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তার ওপর পড়বে। আমি সব সদস্য রাষ্ট্রকে আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা উত্তেজনা প্রশমনে পদক্ষেপ নেয় এবং জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে।’
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা (সাংবাদিকদের কাছে)
ইরানে পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘এই সংঘাতের দ্রুত প্রশমনের জন্য এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তায়ানি (রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার RAI-এ)
‘এই হামলায় পরমাণু অস্ত্র উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এখন দরকার উত্তেজনা হ্রাস এবং আলোচনার মাধ্যমে ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরানো।’
নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স
‘গত ২৪ ঘণ্টায় যা ঘটেছে, তা গভীর উদ্বেগের বিষয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পর মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে। আমরা সবাইকে আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানাই, কারণ কূটনৈতিক সমাধানই দীর্ঘস্থায়ী পথ।’
ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল (টেলিগ্রামে)
ইরানে পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভেনেজুয়েলা। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল এক টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছেন, ‘ভেনেজুয়েলা ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানায় এবং অবিলম্বে এই শত্রুতার অবসান চায়। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন বোমাবর্ষণ একটি গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধ।’
কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল (এক্স-এ)
‘আমরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর মার্কিন বোমাবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানাই। এটি মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের ভয়াবহ বিস্তার এবং মানবতার জন্য একটি বিপজ্জনক মোড়। এই আগ্রাসন জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে।’
মন্তব্য করুন