জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এবার দুর্দান্ত এক সংহতিময় মুহূর্তের সাক্ষী হলো। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন নিয়ে তীব্র ভাষায় বক্তব্য দেওয়ার পর ঘটে গেল এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা এ সময় তাকে আলিঙ্গন করেন এবং তার মাথায় চুমু দেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোলের প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।
পেত্রো ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করে তাদের ‘নাৎসি’ বলে আখ্যা দেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলে শিয়ার দেশগুলোর নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক সামরিক জোট গড়ে তুলে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের অন্যসব মিত্রকে দেশটিতে অস্ত্রবাহী জাহাজ পাঠানো বন্ধ করার আহ্বান জানান।
এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বকে আক্রমণ করে বলেন, তারা অভিবাসনকে অজুহাত হিসেবে ঠিকই তুলে ধরছে, কিন্তু জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কিছুই করছে না। অথচ এই সংকট সৃষ্টির পেছনে তাদের দায়ই সবচেয়ে বেশি। নিজ দেশে শ্বেতাঙ্গদে অধিকারের পক্ষে কথা বললেও এটি তারা কেবল ভোট পেয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই ব্যবহার করে আসছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের বিষয়ে পেত্রো বলেন, জাতিসংঘকে এখনই বদলাতে হবে। আর এ জন্য একটি গুণগত পরিবর্তিত অপরিহার্য। মানবিক জাতিসংঘকে অবশ্যই আগে গাজায় গণহত্যা থামাতে হবে।
এরপর, ভাষণ শেষ হলে পেত্রোকে আলিঙ্গন করে তার মাথায় চুমু দেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা। তার এ অঙ্গভঙ্গি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর দ্রুতই বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও জাতিসংঘের কূটনীতিকরা একে নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করেন। অনেকে এটিকে পেত্রোর বক্তব্যের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন হিসেবেও দেখছেন।
গাজার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পেত্রো ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করে আসছিলেন। জাতিসংঘে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি নাৎসি জার্মানির প্রচারমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলসের নাম টেনে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। পেত্রোর এমন বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদি সংগঠনগুলো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা নাৎসি তুলনা ও এ ধরনের ভাষাকে নিন্দা করেছে। শুধু কথায় নয়, পেত্রোর অবস্থান কলম্বিয়ার নীতিতেও প্রতিফলিত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে পেত্রো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে নাৎসি বলে তুলনা করার পর ইসরায়েল কলম্বিয়ায় নিরাপত্তা সরঞ্জাম রপ্তানি বন্ধ করে। পরে কলম্বিয়াও ইসরায়েলের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা পুরোপুরি স্থগিত করে।
এর আগে, ২০২৪ সালের মে মাসে পেত্রো ঘোষণা দেন, কলম্বিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে। তিনি ইসরায়েলি নেতৃত্বকে ‘গণহত্যাকারী’ আখ্যায়িত করেন। এ ছাড়া কলম্বিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলায় অংশ নিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে আবেদন করে। জাতিসংঘে লুলার প্রকাশ্য সমর্থনের পর গাজা ইস্যুতে কূটনৈতিক অঙ্গনে লাতিন আমেরিকার ঐক্য এখন নতুন এক প্রতীকী চিত্র পেয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন ভিডিওতে...
মন্তব্য করুন