মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা কাটছে না। ২০ দফার এই প্রস্তাব সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউসে ঘোষণা করেন তিনি। এ সময় তার পাশে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
ট্রাম্প এই প্রস্তাববকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যা দিলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অনেক দিক এখনো পরিষ্কার নয়। আর সেসব অনিশ্চয়তাই ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন ও গোটা অঞ্চলের পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
গাজা শাসন করবে কারা?
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজায় ‘অরাজনৈতিক টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত একটি অস্থায়ী কমিটি’ প্রশাসনিক দায়িত্ব নেবে। তবে কিভাবে এই কমিটি গঠিত হবে, কারা সদস্য বাছাই করবে—তা স্পষ্ট করা হয়নি। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ট্রাম্প নিজে ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার একটি ‘বোর্ড অব পিস’ গঠন করবেন, যারা গাজা প্রশাসন তদারকি করবে। কিন্তু এই বোর্ড ও স্থানীয় কমিটির মধ্যে সম্পর্ক কেমন হবে এবং কারা দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত নেবে—তা একেবারেই অজানা।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কী?
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) তাদের সংস্কার কর্মসূচি শেষ করলে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে। তবে কে এই সংস্কারের অগ্রগতি যাচাই করবে বা কোন মানদণ্ড পূরণ হলে পিএ গাজা শাসনের যোগ্য হবে—তা বলা হয়নি। সময়সীমাও নির্ধারণ করা হয়নি। অন্যদিকে নেতানিয়াহু ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, ‘গাজা প্রশাসন না হামাস, না ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে থাকবে।’ এতে বোঝা যায়, পিএ-এর ভূমিকা নিয়ে ইসরায়েলের আপত্তি স্পষ্ট।
আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠিত হবে কীভাবে?
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গাজার নিরাপত্তা রক্ষায় একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে। কিন্তু কোন দেশ এই বাহিনীতে সৈন্য পাঠাবে, তাদের দায়িত্ব কী হবে, কিংবা তারা সেনাবাহিনী না পুলিশের ভূমিকা নেবে—এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এমনকি তারা কি হামাসের বিরুদ্ধে লড়বে, নাকি ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করবে—সেটিও অজানা রয়ে গেছে।
ইসরায়েল কবে গাজা ছাড়বে?
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজার নিরস্ত্রীকরণের অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করবে। কিন্তু সময়সূচি, মানদণ্ড বা কে এ অগ্রগতি যাচাই করবে—কোনো কিছুই পরিষ্কার নয়। বরং বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজার চারপাশে একটি ‘নিরাপত্তা বলয়’ ধরে রাখবে যতক্ষণ না তারা নিশ্চিত হয় যে সন্ত্রাসের পুনরুত্থান আর হবে না।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কি বাস্তবে আসবে?
ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অনেক দেশ ভুল করে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বপ্নকে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও, তাকে নিশ্চিত অধিকার হিসেবে স্বীকার করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে, পিএ সংস্কার সম্পন্ন করলে এবং গাজার পুনর্গঠন এগোলে ‘সম্ভবত’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনা শুরু হতে পারে। অর্থাৎ, শর্তসাপেক্ষ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে রাখা হয়েছে।
পরিশেষে
ট্রাম্পের পরিকল্পনা ঘোষণার পর একে অনেকে ‘শান্তির রোডম্যাপ’ বললেও বাস্তবে এর নানা অস্পষ্টতা ও শর্ত ফিলিস্তিনিদের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিকল্পনা প্রয়োগের পথ সুগম করা কঠিন হবে, আর এর মধ্যেই ঝুলে থাকবে গাজার ভবিষ্যৎ ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বপ্ন।
সূত্র : আল জাজিরা
মন্তব্য করুন