গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ দুই বছরের সংঘাত হামাসের কর্তৃত্বকে দুর্বল করে দিয়েছে। যুদ্ধবিরতির পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, হামাসের পুরোনো আধিপত্যে এখন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে কয়েকটি স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী ও প্রভাবশালী গোত্র। অবরুদ্ধ এই উপত্যকার অভ্যন্তরে তারা ধীরে ধীরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
মিসরের শারম আল শেখে শান্তি ঘোষণায় স্বাক্ষর ও যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হামাস ফের গাজার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে অভিযানে নামে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্থায়ীভাবে নিরাপত্তা রক্ষার অনুমোদন পাওয়ার পর, হামাস প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর দমন অভিযান চালায় এবং ডজনখানেক প্রতিদ্বন্দ্বী সদস্যকে হত্যা করে।
নিচে গাজার ভেতরে হামাসের নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া কয়েকটি প্রধান গোষ্ঠী ও গোত্রের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হলো—
আবু শাবাব গোত্র
রাফাহ অঞ্চলে ইয়াসের আবু শাবাব এখন হামাসবিরোধী সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। তার নেতৃত্বাধীন বেদুইন সম্প্রদায়টি দক্ষিণ গাজার সেই অংশে সক্রিয়, যা এখনো ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আবু শাবাব শত শত যোদ্ধা নিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে, যাদের তিনি আকর্ষণীয় বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হামাসের অভিযোগ, তার সঙ্গে ইসরায়েলের যোগসাজশ রয়েছে। তবে আবু শাবাব তা অস্বীকার করেছেন।
গোত্রের অভ্যন্তরে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে মতভেদ রয়েছে, তবে ধারণা করা হয় তার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০০।
দোগমোশ গোত্র
গাজা উপত্যকার অন্যতম বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী গোত্র দোগমোশ, যারা দীর্ঘদিন ধরে ভালোভাবে অস্ত্রসজ্জিত।
তাদের নেতা মুমতাজ দোগমোশ একসময় ‘পপুলার রেজিস্ট্যান্স কমিটি’-র সশস্ত্র শাখার প্রধান ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি গঠন করেন ‘আর্মি অব ইসলাম’, যা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে।
এই সংগঠনটি ২০০৬ সালে হামাসের সঙ্গে মিলে ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শালিতকে আটক করেছিল। পরে বন্দি বিনিময়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মুমতাজ দোগমোশের অবস্থান বর্তমানে অজানা। হামাসের সঙ্গে এই গোত্রের সম্পর্ক অতীতে বহুবার খারাপ হয়েছে। সম্প্রতি রবি ও সোমবার হামাস ও দোগমোশ যোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে উভয় পক্ষেই বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
আল-মাজায়দা গোত্র
দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরকেন্দ্রিক এই গোত্রও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে হামাস অভিযানে নামে— তাদের দাবি, হামাস সদস্য হত্যায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযানটি পরিচালিত হয়। বন্দুকযুদ্ধে উভয় পক্ষেরই কয়েকজন নিহত হন।
গোত্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আবু শাবাবের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং হামাস রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিতে ‘টার্গেট কিলিংয়ের অজুহাত’ ব্যবহার করছে। তবে গোত্রপ্রধান পরে এক বিবৃতিতে হামাসের নিরাপত্তা অভিযানে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন, যা গোত্রের অভ্যন্তরীণ বিভাজনের ইঙ্গিত দেয়।
হেলিস গোত্র ও রামি হেলিস
গাজা সিটির শেজায়িয়া এলাকার অন্যতম বৃহৎ পরিবার হেলিস গোত্র। এখানকার জ্যেষ্ঠ সদস্য রামি হেলিস ও স্থানীয় নেতা আহমেদ জুনদেয়া মিলে কয়েক মাস আগে হামাসবিরোধী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী গঠন করেন। তারা বর্তমানে শেজায়িয়ার সেই অংশে সক্রিয়, যা এখনো ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই গোষ্ঠী হামাসের পুনর্গঠনের পথে নতুন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হামাসের জন্য ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ
গাজার অভ্যন্তরে এখন হামাসের শত্রু কেবল ইসরায়েল নয়, নিজেদের ভেতরকার প্রতিদ্বন্দ্বীরাও। স্থানীয় গোত্রীয় শক্তি, ব্যক্তিগত সেনাদল ও পুরোনো সশস্ত্র সংগঠনগুলো হামাসের কর্তৃত্বে চিড় ধরাচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকলে, হামাসের জন্য আবার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
সূত্র : রয়টার্স
মন্তব্য করুন