

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। এ সফরে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু ছিল সৌদি আরবের বহুল প্রত্যাশিত মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের উদ্যোগ। দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব এই অতি আধুনিক বিমান কিনতে চাইলেও ইসরায়েলের সামরিক আধিপত্য নীতি বজায় রাখার যুক্তিতে ওবামা ও বাইডেন প্রশাসন বিক্রিতে সম্মতি দেয়নি। তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে যে, রিয়াদ এফ-৩৫ পেতে পারে।
এফ-৩৫ হলো যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিনের তৈরি উন্নত স্টেলথ ফাইটার জেট, যা রাডারে শনাক্ত করা কঠিন, দূরপাল্লায় আঘাত হানতে সক্ষম এবং আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে আকাশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মতো প্রযুক্তিতে সজ্জিত। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালি, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ এই বিমান ব্যবহার করছে।
সৌদি আরবের দাবি, এফ-৩৫ হাতে পেলে তাদের বিমানবাহিনীর সক্ষমতা অন্য মাত্রায় পৌঁছাবে। ইরানসহ আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলা, ভবিষ্যতের সংঘাতে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক প্রভাব বাড়ানোই তাদের মূল লক্ষ্য। বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে রিয়াদের সামরিক বহরে এফ-৩৫ যুক্ত হওয়া হবে বড় প্রযুক্তিগত পরিবর্তন।
বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, তিনি সৌদি আরবকে ইসরায়েলের সমমানের এফ-৩৫ বিক্রির পক্ষে। এটি দীর্ঘদিনের মার্কিন নীতির বড় পরিবর্তন, কারণ ওয়াশিংটনের নিরাপত্তা নীতিতে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সামরিক প্রাধান্য বজায় রাখার অঙ্গীকার ছিল। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো কংগ্রেসের হাতে, যেখানে চাইলে আইনপ্রণেতারা অস্ত্র বিক্রি বাধাগ্রস্ত করতে পারেন।
২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্কে যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল, এবারের সফর ও ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান দুই দেশের সম্পর্ক ফের ঘনিষ্ঠ হওয়ার বার্তা দিচ্ছে।
কংগ্রেস অনুমোদন দিলে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের পর সৌদি আরব হবে দ্বিতীয় দেশ, যার হাতে এই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান পৌঁছাবে। তবে প্রশ্ন আছে—ইসরায়েল এটি মেনে নেবে কি না, কংগ্রেস কি অনুমোদন দেবে, এবং এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যে কী পরিবর্তন ঘটবে—দৃষ্টি এখন সেদিকেই।
মন্তব্য করুন