ফিলিস্তিন-ইসরায়েলি সংঘাতে ব্যাপক বিপাকে পড়েছেন ইসরায়েলে থাকা অন্যান্য দেশের নাগরিকরা। ফিলিস্তিনি হামলায় এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অনেক নাগরিককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যাদের অবস্থান সমন্ধে কারও কাছেই এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র
সোমবার পর্যন্ত ফিলিস্থিনিদের হামলায় ৯ জন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা কাউন্সিল।
নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জানান, এ পর্যন্ত ৯ জন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই এবং আহতরা যেন দ্রুত সেরে ওঠে সে কামনা করি। আমরা গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ইসরায়েলিদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আমরা অবস্থা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
বর্তমানে কতজন আমেরিকানকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা নির্ণয়ের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন মৃত আমেরিকানদের নিয়ে তথ্য সংগ্রহে দিনরাত কাজ করছে।
যুক্তরাজ্য
এদিকে যুক্তরাজ্য সরকারের একটি সূত্রের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১০ জনের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক নিহত বা নিখোঁজ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশটির পররাষ্ট্রবিষয়ক কার্যালয় সোমবার এ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এ সংকট নিয়ে কথা বলতে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা ডেকেছেন।
প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজারেরও বেশি ব্রিটিশ নাগরিকের বসবাস ইসরায়েলে। এই নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের ভ্রুকুঞ্চন বেড়েই চলেছে। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় হামলার কারণ এখনো ব্রিটিশ নাগরিকদের ঠিক কতজন নিরাপদে রয়েছেন তা জানা যায়নি।
থাইল্যান্ড
এখন পর্যন্ত ১২ জন থাই নাগরিক নিহতের খবর নিশ্চিত করা গেছে। এ ছাড়া ১১ জনকে অপহরণ করা হয়েছে।
বিবিসির প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, শনিবার থেকে ৮ জন থাই নাগরিকের হতাহতের খবর মিলেছে। ইসরায়েলে ৩০ হাজার থাই নাগরিক কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। তাদের অনেকেই গাজা সীমান্তে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এদিকে নেপাল জানিয়েছে ইতোমধ্যে তাদের ৮ নাগরিক মারা গেছে।
এ ছাড়াও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির অনেক নাগরিকের। তাদের কপালে হত্যা, অপহরণ বা বিস্ফোরণে আহত হওয়ার কোনটি ঘটেছে তা বলা মুশকিল। থাইল্যান্ডের শ্রমমন্ত্রী এএফপিকে জানিয়েছেন প্রায় ৫ হাজার থাই শ্রমিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে কাজ করেন। তিনি জানিয়েছেন ১০৯৯ জন শ্রমিক নিরাপদে ফিরেছেন। তারা নিরাপদে থাকা নাগরিকের রেজিস্টারে নাম তুলেছেন।
শনিবার হামলা শুরুর পরপরই মিভাতাহিম অঞ্চলের শ্রমিকদের ওপর হামাস যোদ্ধারা হামলা করে। এক থাই শ্রমিক বিবিসিকে জানান, প্রথমে তারা রকেট হামলা করে এরপর স্থলভাগে আক্রমণ শুরু করে। পরে ওই শ্রমিককে উদ্ধার করে ইসরায়েলি সৈন্যরা। তিনি আরও জানান, এসময় তার সঙ্গে থাকা আরেক শ্রমিকের পায়ে গুলি লেগে সেখানে বোতলের মুখের সমান একটি গর্ত হয়েছিল।
নেপাল
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান লড়াইয়ে নেপালের অন্তত ১০ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।
নেপালি রাষ্ট্রদূত কান্ত রিজাল এএনআইকে জানিয়েছেন, ‘নিহতরা অ্যালুমিম কিবুতজের কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী। আরও একজন শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে।’
ইসরায়েলে নেপালি দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি অর্জুন ঘিমিরে এএনআইকে বলেছেন, ‘ইসরায়েলি পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছে নিহত ১০ নেপালি শিক্ষার্থীর মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া কেউ কেউ এখনও যোগাযোগের বাইরে এবং আহত কারও কারও শারীরিক অবস্থা গুরুতর। তাই মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।’
দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির সরকারের রেকর্ড অনুযায়ী, আনুমানিক সাড়ে চার হাজার নেপালের নাগরিক বর্তমানে ইসরায়েলে বসবাস করছেন। হামাস ও ইসরায়েলের সংঘাত শুরুর পর নেপাল সরকারও তার নাগরিকদের সতর্ক থাকার এবং কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণ করার অনুরোধ করেছে।
জার্মানি
এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঠিক কতজন জার্মান নাগরিককে হত্যা বা অপহরণ করা হয়েছে তা জানায়নি দেশটির প্রশাসন। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শানি লৌক নামে জার্মান এক ট্যাটু শিল্পীকে গাড়িতে তোলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। লৌকের মা একটি ভিডিওতে বলেছেন, তার ৩০ বছর বয়সী মেয়ে ইসরায়েলে একটি ট্যুরিস্ট গ্রুপের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল। তিনিও ভাইরাল ভিডিওটি দেখেছেন। তবে তিনি আরও তথ্য চেয়েছেন। তবে একাধিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে লৌককে।
ইসরায়েল হামাস যোদ্ধাদের বিদেশি নাগরিকদের তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কর্মকর্তাদের মতে প্রায় ১০০ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে হামাসের দাবি তারা ১৩০ জনের বেশি-বিদেশি নাগরিকদের তুলে নিয়ে গিয়েছে।
হঠাৎ কেন হামাসের ভয়ঙ্কর এ হামলা:
হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি আলজাজিরাকে বলেছেন, দশকের পর দশক ইসরায়েলি দখলদাররা ফিলিস্তিনিদের ওপর নৃশংসতা চালাচ্ছে। এসব নৃশংসতার পাল্টা জবাব হিসেবে তারা এ সামরিক অভিযান শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আমরা চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন গাজায় নৃশংসতা বন্ধ করে। ফিলিস্তিনি জনগণ ও আল-আকসার মতো আমাদের পবিত্র স্থানে নৃশংসতা বন্ধ করে। এসব কারণেই এবারে যুদ্ধ শুরু হলো।
ইহুদিদের সুকট উৎসবের ছুটির দিনে সম্প্রতি আল আকসা মসজিদে হাজারো ইসরায়েলি সেটেলার ঢুকে পড়ে। এ ছাড়া সম্প্রতি ইসরায়েলি সেটেলারদের আগ্রাসন আরও বেড়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, বছরের প্রথম আট মাসে প্রতিদিন অন্তত ৩ জন করে ফিলিস্তিনি নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এসব কারণেই এ হামলা চালিয়েছে হামাস।
মন্তব্য করুন