সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। এতে চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে ইরানের হামলার আশঙ্কায় বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করেছে দেশটি। সতর্কতার অংশ হিসেবে রিজার্ভ ফোর্সও তলব করেছে তেলআবিব। বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) আল মায়াদিন টিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার হিজবুল্লাহ বা অন্য কোনো গ্রুপকে প্রতিশোধ নিতে ব্যবহার না করে ইরান সরাসরি ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের সাবেক সামরিক গোয়েন্দাপ্রধান অ্যামোস ইয়ালদিন বলেন, ইসরায়েলে যদি ইরান সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, এতে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। তিনি গত জানুয়ারিতে পাকিস্তানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা উল্লেখ করেন। ইরানের হুমকির পর ইসরায়েল তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে।
এ বিষয়ে মার্কিন থিংকট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইলিয়ট আবরাসমও বলেছেন, ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ চায় না। কারণ তারা অনেক কৌশলী। তবে ইসরায়েলি স্বার্থে তেহরান আঘাত হানবেই।
মূলত গত সোমবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিসহ ৬ জন নিহত হন।
২০০৮ সাল থেকে জাহেদি পুরো অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বিস্তারের কাজে ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি আইআরজিসির অভিজাত কুদস ফোর্সের বিদেশ শাখায় কমান্ডার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। জাহেদি সিরিয়া ও লেবাননে কুদস ফোর্সের নানা কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে কয়েক দশক ধরে এই দুই দেশে ইরানের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক প্রভাব বেড়েছে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছিলেন ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি। ইরানি এই জেনারেল পশ্চিম এশিয়ায় বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী সশস্ত্র ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর ‘প্রতিরোধ অক্ষের’ প্রধান কারিগর ছিলেন। তিনি ইরাক, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনের গোষ্ঠীগুলোকে রাজনৈতিক-সামরিক সমর্থন দেওয়াসহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় কয়েক দশক কাজ করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে জাহেদি ছিলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের প্রতি ইরানের সাহায্য-সমর্থন জোগানের শীর্ষ ব্যক্তিদের একজন। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধের ফলে এখন বাশার আল-আসাদ একটি খণ্ডিত দেশের ক্ষমতায় আছেন। এ ঘটনার পর জাহেদি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ পদধারী কোনো সামরিক কমান্ডার, যিনি বিদেশি হামলায় নিহত হলেন।
জাহেদি নিহত হওয়ার পরপরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, কূটনৈতিক মিশনে দিবালোকের এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে ‘অনুশোচনা’ করিয়ে ছাড়বে তেহরান। খামেনির এই হুমকিতে নড়েচড়ে বসেছে ইসরায়েল।
মন্তব্য করুন