গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদল হামাসকে নির্মূলে গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা ও সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। হামাসকে নির্মূল না করা পর্যন্ত এ যুদ্ধ শেষ হবে না বলেও দাবি করে আসছে তেল আবিব। এরই মধ্যে ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে এত প্রাণহানি হলেও যুদ্ধের ছয় মাস পর হামাসকে ঠিক কতটা নির্মূল করতে পেয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েল বলেছে, যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং গাজার সুড়ঙ্গের বিশাল নেটওয়ার্ক ধ্বংস করেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধে মোট ১১৩ জন হামাস নেতাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাদের অধিকাংশকে যুদ্ধের প্রথম তিন মাসে হত্যা করা হয়েছে। পরের তিন মাসে তেমন হামাস নেতাকে হত্যার খবর দিতে পারেনি নেতানিয়াহু বাহিনী।
গেল ২৬ মার্চ হামাসের সামরিক শাখার ডেপুটি কমান্ডার মারওয়ান ইসাকে হত্যার দাবি করে ইসরায়েল। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যাদের হত্যা করা হয়েছে এর মধ্যে তিনিই ছিলেন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সবচেয়ে বড় নেতা। তবে হামাস এই তথ্য নিশ্চিত করেনি।
বিবিসি বলছে, সিনিয়র নেতা হিসাবে আইডিএফ এমন সব ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করে হামলায় নিহত হওয়ার দাবি করেছে, তারা আদৌ এই গোষ্ঠীর সদস্য কি না তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এ তালিকায় যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মুস্তাফা থুরায়া। জানুয়ারিতে তাকে বহনকারী গাড়িতে হামলা চালানো হয়। তখন তিনি দক্ষিণ গাজায় একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছিলেন।
এ ছাড়া লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হামাসের রাজনৈতিক নেতা সালেহ আল আরৌরিকে হত্যা করা হয়। তবে বিবিসি জানায়, ইয়াহিয়া সিনওয়ারসহ গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অনেক শীর্ষ নেতা এখনো বেঁচে আছেন বলে ধারণা করা হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইসরায়েল-ফিলিস্তিনবিষয়ক সিনিয়র বিশ্লেষক মাইরাভ জোনসজেইন বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী এখনো হামাসের শীর্ষ নেতাদের কাছে ঘেঁষতে পারেনি। ইসরায়েল মূলত হামাসের মূল নেতাদের আটক এবং গাজার নিয়ন্ত্রণ থেকে হামাসকে সরিয়ে দিতে চায়, কিন্তু এগুলোর কোনটাই এখনো তারা অর্জন করতে পারেনি।
এদিকে হামাসকে নির্মূল করার অংশ হিসেবে ইসরায়েল গাজার নিচে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির বিস্তৃত টানেলের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিবিসির অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৩৬টি হামলায় চারশটিরও বেশি টানেল শ্যাফটের ধ্বংস করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে শ্যাফটকে গুঁড়িয়ে দিলেও এর ভেতরে সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক অক্ষত থাকে।
মন্তব্য করুন