বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষদের অনেকেই কেবল অর্থ উপার্জন নয়, বরং মানবতার কল্যাণেও নিজেদের সম্পদ বিলিয়ে দিচ্ছেন। কেউ দারিদ্র্য ও রোগ দূরীকরণে, কেউবা শিক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষায়, আবার কেউ মানবাধিকার রক্ষায় অনুদান দিচ্ছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ‘ফোর্বস’ বিশ্বের সবচেয়ে দানশীল ১০ ধনকুবেরের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ওয়ারেন বাফেট, বিল গেটস, জর্জ সরোস, মাইকেল ব্লুমবার্গসহ আরও অনেকে।
১। ওয়ারেন বাফেট ও পরিবার
বিখ্যাত বিনিয়োগকারী ও বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের প্রধান নির্বাহী ওয়ারেন বাফেট বিশ্বের অন্যতম উদার দাতা হিসেবে পরিচিত।
৯৫ বছর বয়সী এই মার্কিন ধনকুবেরের নিট সম্পদ ১৪ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার, যার মধ্যে প্রায় ৬ হাজার ২০০ কোটি (৬২ বিলিয়ন) ডলার তিনি দান করেছেন— মোট সম্পদের প্রায় ৩০ শতাংশ।
বাফেট মূলত স্বাস্থ্যসেবা, দারিদ্র্য বিমোচন ও শিক্ষায় অনুদান দেন। তিনি বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনসহ নিজের সন্তানদের পরিচালিত বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এই অর্থ বিলিয়ে দেন।
২। বিল গেটস ও মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস
বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতব্য সংস্থাগুলোর একটি। এই সাবেক দম্পতি যৌথভাবে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৭০ কোটি (৪৭ বিলিয়ন) ডলার দান করেছেন, যা তাদের নিট সম্পদের প্রায় অর্ধেক।
তাদের অনুদান মূলত টিকা কর্মসূচি, রোগ নির্মূল এবং বৈশ্বিক দারিদ্র্য হ্রাসে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিবাহবিচ্ছেদের পরও তারা মানবকল্যাণের কাজে একসঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন।
৩। জর্জ সরোস
বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগকারী ও সমাজসংস্কারক জর্জ সরোস এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩০০ কোটি (২৩ বিলিয়ন) ডলার দান করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কাজ করে।
৭২০ কোটি ডলারের বর্তমান সম্পদ থাকা সরোস বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের নাগরিক স্বাধীনতা ও শিক্ষা বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
৪। মাইকেল ব্লুমবার্গ
নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র ও ব্লুমবার্গ এলপির প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ব্লুমবার্গ দান করেছেন ২ হাজার ১১০ কোটি (২১ বিলিয়নের বেশি) ডলার, যা তার সম্পদের প্রায় ১৭ শতাংশ।
তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করেন। বিশেষ করে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অনুদানে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিনা টিউশন ফিতে পড়াশোনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
৫। ম্যাকেঞ্জি স্কট
অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের সাবেক স্ত্রী ও লেখক ম্যাকেঞ্জি স্কট দান করেছেন প্রায় ১ হাজার ৯২৫ কোটি (১৯ বিলিয়ন) ডলার, যা তার মোট সম্পদের ৩৬ শতাংশ।
স্কট শিক্ষা, বাসস্থান ও অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করেন। তিনি প্রায়ই নিঃশর্তভাবে হাজার হাজার ক্ষুদ্র সংগঠনকে তহবিল দেন, যাতে প্রান্তিক মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলা যায়।
৬। ম্যারিলিন সিমন্স ও পরিবার
বিজ্ঞান ও পরিবেশ সুরক্ষায় উদার সহায়তার জন্য পরিচিত ম্যারিলিন সিমন্স ও তার পরিবার দান করেছেন ৯৪০ কোটি ডলার, যা তাদের সম্পদের এক-চতুর্থাংশের কাছাকাছি। স্বামী জিম সিমন্সের মৃত্যুর পরও ম্যারিলিন সিমন্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অনুদান দিয়ে যাচ্ছেন।
৭। মার্ক জাকারবার্গ ও প্রিসিলা চ্যান
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ও তার স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান দান করেছেন ৫১০ কোটি ডলার— তাদের মোট সম্পদের প্রায় ২ শতাংশ।
তাদের উদ্যোগে গঠিত চ্যান-জাকারবার্গ বায়োহাব বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের গবেষণায় সহায়তা দিচ্ছে। তারা শিক্ষা ও উদ্ভাবনেও ব্যাপক বিনিয়োগ করছেন।
৮। স্টিভ ও কনি বালমার
মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও স্টিভ বালমার ও তার স্ত্রী কনি জনসেবামূলক কাজে দিয়েছেন ৪৯৯ কোটি ডলার, যা তাদের সম্পদের প্রায় ৪ শতাংশ।
তাদের দানের প্রধান ক্ষেত্র জলবায়ু উদ্যোগ, শিক্ষা সংস্কার ও সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন। তারা সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নেও কাজ করেন।
৯। জেফ বেজোস
অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এখন পর্যন্ত দান করেছেন ৪১০ কোটি ডলার, যা তার বিশাল সম্পদের সামান্য অংশ হলেও বৈশ্বিক প্রভাব ফেলেছে।
বেজোস ‘বেজোস আর্থ ফান্ড’ গঠন করেছেন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য। পাশাপাশি গৃহহীনতা নিরসন ও নিম্নআয়ের শিশুদের শিক্ষায় সহায়তা দিচ্ছেন।
১০। ফিল ও পেনি নাইট
নাইকির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফিল নাইট ও তার স্ত্রী পেনি নাইট দান করেছেন ৩৯৮ কোটি ডলার, যা তাদের সম্পদের প্রায় ১০ শতাংশ।
তারা বিশেষ করে শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অবদান রাখছেন। ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সহায়তায় নতুন গবেষণা ক্যাম্পাস ও বৃত্তি কর্মসূচি চালু হয়েছে।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন