ব্রিটেনের গৃহহীনতা-বিষয়ক মন্ত্রী ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ রোশনারা আলীকে নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। তিনি নিজের বাড়ির পুরোনো চার ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করে সেখানের ভাড়া ৭০০ পাউন্ড বাড়ানোর পর এ বিতর্ক শুরু হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য আই পেপার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এমপি রোশনারা আলী তার পূর্ব লন্ডনের টাউন হাউস থেকে ভাড়াটেদের উচ্ছেদ করার পর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভাড়া বাড়িয়ে পুনরায় তা তালিকাভুক্ত করার অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
খবরে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে লেবার পার্টির জয়ের পর থেকে গৃহহীনতা-বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রোশনারা লন্ডনের অলিম্পিক পার্কের কাছে তার চার বেডরুমের টাউন হাউসের চারজন ভাড়াটের জন্য লিজ নবায়ন করেননি। একজন রেস্তোরাঁর মালিক লরা জ্যাকসনসহ এই ভাড়াটেদের নভেম্বরে চার মাসের নোটিশ দিয়ে বাড়িটি খালি করতে বলা হয়েছিল। তারা তখন মাসিক ৩ হাজার ৩০০ পাউন্ড ভাড়ায় সেখানে থাকতেন।
ভাড়াটেরা চলে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জ্যাকসন দেখতে পান যে, বাড়িটি প্রায় ৪ হাজার পাউন্ড মাসিক ভাড়ায় পুনরায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে; যা আগের মাসিক ভাড়ার চেয়ে ৭০০ পাউন্ড বেশি। আই পেপারের প্রতিবেদক পরে নিশ্চিত হন যে, নতুন ভাড়াটেরা চার-পাঁচ মাস আগে সেই বর্ধিত ভাড়া দিয়ে এসেছেন। এটি লেবার পার্টির ভাড়াটেদের অধিকার বিলের নীতির সরাসরি পরিপন্থি।
৩৩ বছর বয়সী মিসেস জ্যাকসন দ্য আই পেপারকে বলেন, ‘এটি একটি সম্পূর্ণ রসিকতা। ভাড়াটেদের কাছ থেকে এত টাকা আদায় করার চেষ্টা করা চাঁদাবাজি।’
যুক্তরাজ্যে অধিকার বিল আগামী বছর আইনে পরিণত হতে চলেছে। বিলটির উদ্দেশ্য হলো, কোনো বাড়িওয়ালা সম্পত্তি বিক্রি করার উদ্দেশ্যে ভাড়াটেদের চলে যেতে বললে, তারা চলে যাওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে পর্যন্ত বাড়িটি বেশি ভাড়ায় পুনরায় তালিকাভুক্ত করতে পারবেন না।
রোশনারা আলীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই সংসদ সদস্য প্রাথমিকভাবে বাড়িটি বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং কোনো ক্রেতা না পেয়েই আবার ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার একজন মুখপাত্র বলেছেন, তিনি সব প্রাসঙ্গিক আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলেছেন। যদিও এই বক্তব্যের পরও সমালোচনা থামেনি।
এ ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভাড়াটেদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো তীব্র সমালোচনা করেছে। কনজারভেটিভ পার্টির শ্যাডো হাউজিং সেক্রেটারি জেমস ক্লেভারলি এই অভিযোগগুলোকে চরম ভণ্ডামির উদাহরণ বলে অভিহিত করেছেন এবং রোশনারাকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
রোশনারার পক্ষে সম্পত্তিটি পরিচালনা করা দুটি লেটিং এজেন্সি—জ্যাক বার্কলে এস্টেটস এবং অ্যাভিনিউ লেটিংস—পুরোনো ভাড়াটেদের কাছ থেকে পুনরায় রঙের জন্য প্রায় ২ হাজার পাউন্ড এবং পেশাদার পরিচ্ছন্নতার জন্য ৩৯৫ পাউন্ড দাবি করার জন্য বিতর্ক আরও বাড়ে।
টেন্যান্ট ফি অ্যাক্ট ২০১৯ অনুযায়ী, উভয় চার্জই নিষিদ্ধ। এই আইন অনুযায়ী, ছোটখাটো ক্ষয়ক্ষতি বাড়িওয়ালার দায়িত্ব এবং পেশাদার পরিচ্ছন্নতার জন্য ফি নেওয়া নিষিদ্ধ। জ্যাকসন এই চার্জগুলোকে হাস্যকর ও অন্যায় বলে মনে করে তিনি জানান, তাদের বাড়িওয়ালা একজন লেবার এমপি, এই তথ্য জানানোর পরেই রহস্যজনকভাবে সেই ফি বাতিল করা হয়।
তিনি বলেন, আমরা যদি জানতাম না যে এই চার্জগুলো বেআইনি, তাহলে আমাদের তা দিতে হতো। এটি শোষণমূলক।
রোশনারা আলী ২০১৪ সালে সম্পত্তিটি কিনেছিলেন। সম্প্রতি তা ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৯৯৫ পাউন্ডে বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে; যা মূল ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৩ লাখ পাউন্ড বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়িটির বিক্রয় মূল্য ৯ লাখ ১৪ হাজার ৯৯৫ পাউন্ড থেকে কমানো হয়েছিল।
রোশনারার জন্য এই বিতর্ক একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ গৃহহীনতা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে তার ভূমিকা হলো ঠিক সেই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা। অথচ এমন সমস্যা নিজেই সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভাড়াটেদের অধিকার বিষয়ক গোষ্ঠী জেনারেশন রেন্টের প্রধান নির্বাহী বেন টুইমি এই অভিযোগগুলোকে বিস্ময়কর এবং সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা বলে অভিহিত করেছেন। যাতে তারা নতুন ভাড়াটে সুরক্ষা আইন দ্রুত কার্যকর করে।
সূত্র : দ্য আই পেপার
মন্তব্য করুন