মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি নতুন প্রজন্মের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘গোল্ডেন ডোম’ গড়ে তুলবেন, যা বর্তমান সময়ের যে কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চেয়েও শক্তিশালী হবে। তার দাবি, দ্বিতীয় মেয়াদে নিজের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে চালু করা সম্ভব হবে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে এবং পুরো প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের ধারণা, প্রকৃত খরচ এই পরিমাণের তিনগুণ পর্যন্ত হতে পারে।
কীভাবে কাজ করবে গোল্ডেন ডোম?
গোল্ডেন ডোম হবে একটি মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক, যা শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য আকাশ হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি আংশিকভাবে ইসরায়েলের আয়রন ডোম থেকে অনুপ্রাণিত। তবে এটি ‘আয়রন ডোম’ প্রযুক্তির মতো হলেও তার চেয়ে অনেক বিস্তৃত এবং উন্নত হবে।
আয়রন ডোম মূলত স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে ধ্বংস করে। এটি ইসরায়েল ২০১১ সাল থেকে ব্যবহার করছে। এর বিপরীতে গোল্ডেন ডোম থাকবে বহুমাত্রিক ও মহাকাশকেন্দ্রিক, যেখানে শত শত স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত, ট্র্যাকিং এবং ধ্বংস করার দায়িত্বে থাকবে।
গোল্ডেন ডোম এমনভাবে গড়া হবে যাতে এটি শুধু ক্রুজ বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নয়, বরং হাইপারসনিক অস্ত্র এমনকি ‘ফ্র্যাকশনাল অরবিটাল বম্বার্ডমেন্ট সিস্টেম (FOBS)’-এর মতো মহাকাশ থেকে ছোড়া অস্ত্রও প্রতিহত করতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, ‘রোনাল্ড রিগান বহু বছর আগে এ ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছিলেন, কিন্তু তখন প্রযুক্তি ছিল না। এখন সময় এসেছে।’ ট্রাম্প মূলত ১৯৮০-এর দশকে রিগান প্রস্তাবিত মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা ‘স্টার ওয়ার্স’ নামে পরিচিত—সেটিকেই বুঝিয়েছেন। গোল্ডেন ডোম পৃথিবীর অপর প্রান্ত বা মহাকাশ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রও আটকাতে পারবে বলে দাবি করেন ট্রাম্প।
বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন চটজলদি সম্ভব নয়। দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিরক্ষা সম্পাদক শশাঙ্ক জোশি বলেন, ‘এটি মার্কিন সেনাবাহিনী গুরুত্বের সঙ্গে নিলেও ট্রাম্পের মেয়াদে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব নয়।’
অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মার্ক মন্টগোমেরি বলেন, ‘সম্পূর্ণ সিস্টেম তৈরি হতে পাঁচ থেকে দশ বছর লেগে যাবে। তবে আগামী তিন বছরের মধ্যেই এমন কিছু অংশ কাজ শুরু করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রকে আরও নিরাপদ করবে।’
মার্কিন কংগ্রেশনাল বাজেট অফিসের মতে, শুধু মহাকাশভিত্তিক অংশগুলোর খরচই আগামী ২০ বছরে ৫৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কে থাকবে এই প্রকল্পের নেতৃত্বে?
মার্কিন স্পেস ফোর্সের ফোর স্টার জেনারেল মাইকেল গেটলিন এই মেগা প্রকল্পের নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনি বর্তমানে স্পেস ফোর্সের মহাকাশ অভিযানের ভাইস চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং মহাকাশ নিরাপত্তা, যোগাযোগ ও ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন।
গেটলিনের নেতৃত্বে এই গোল্ডেন ডোম বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশকেন্দ্রিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে চায়। যদিও এটি এখনো কেবল পরিকল্পনার স্তরে, তবে এর বাস্তবায়ন হলে তা বর্তমান যুগের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে এক যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
সূত্র : বিবিসি
মন্তব্য করুন