ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা চলছে। ইতোমধ্যে এই হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ দাবি জানিয়ে আসছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল জয়লাভ করছে। শুক্রবার (২০ জুন) নিউজার্সিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ইসরায়েল যেহেতু বর্তমানে জয়ের পথে রয়েছে, তাই তাদের এখন হামলা বন্ধ করতে বলা আমার জন্য সহজ নয়।
ট্রাম্প বলেন, যদি কেউ জয়ী হয়, তাহলে তাকে হামলা বন্ধ করতে বলা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু কেউ যদি পরাজিত হয়, তখন তাকে থামতে বলা সহজ হয়। তবে আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি এবং ইরানের সঙ্গেও কথা বলছি। কী হয়, তা দেখা যাক।
এ সময় ট্রাম্প দাবি করেন, চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল ইরানের চেয়ে ভালো করছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল যখন জয়ের পথে থাকে, তখন তাদের থামানো কঠিন হয়ে পড়ে। ইসরায়েল খুব ভালো করছে যুদ্ধে, আর ইরান তুলনামূলকভাবে কম সফল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্যে স্পষ্ট হয়, তেল আবিবের সামরিক অভিযানের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে দখলদার ইসরায়েলের হামলা চলাকালীন ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবে না বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। খবর বিবিসির।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় শুক্রবার (২০ জুন) আলোচনায় মিলিত হয়েছিলেন ইরান ও ইউরোপের একাধিক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বৈঠক শেষে ইরান জানায়, দখলদারদের হামলা চলমান থাকা অবস্থায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করবে না। পাশাপাশি, যেকোনো আলোচনায় বসার আগে ‘জঘন্য’ হামলার দায়ে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচারের আওতায় আনতে হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেয় তেহরান।
আব্বাস আরাগচি বলেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ হলে এবং ইরানে যে জঘন্য হামলা চালানো হয়েছে, তার জন্য আগ্রাসনকারীদের বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে ইরান আবারও কূটনৈতিক সমাধানের পথ বিবেচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। এসব কর্মসূচির ওপর হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইরান তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার ইরাক জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরাকের প্রতিনিধি জানান, নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের ঠিক আগে ইসরায়েলের ৫০টি যুদ্ধবিমান ইরাকের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করে।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরাকের জাতিসংঘ মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আব্বাস কাযম ওবায়েদ আল-ফাতলাওয়ি এই ঘটনাকে ইরাকের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেন।
আল-ফাতলাওয়ি বলেন, যুদ্ধবিমানগুলো সিরিয়া-জর্ডান সীমান্ত এলাকা থেকে ইরাকের আকাশসীমায় প্রবেশ করে। প্রথম দফায় ২০টি যুদ্ধবিমান অনুপ্রবেশ করে, এরপর আরও ৩০টি যুদ্ধবিমান ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে এগিয়ে যায়। এসব যুদ্ধবিমান বসরা, নাজাফ ও কারবালা শহরের আকাশসীমা অতিক্রম করেছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের আকাশসীমা লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পবিত্র স্থান ও অঞ্চলগুলোর ওপর এমন হুমকি আমাদের জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, কারণ এসব ধর্মীয় স্থান আমাদের জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
মন্তব্য করুন