ইরানে হামলার পর বড় বিপাকে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দেশটির বিরুদ্ধে জয় দাবি করেছেন তিনি। তবে জরিপ বলছে, নেতানিয়াহুকে আর বিশ্বাস করেন না বহু ইসরায়েলি।
শনিবার (২৮ জুন) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের সংঘাতের পর ‘ঐতিহাসিক বিজয়’ দাবি করেছেন নেতানিয়াহু। তবে সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের অনেক নাগরিক তার ওপর আস্থা রাখছেন না এবং তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিবিসি জানিয়েছে, মার্চ মাসে যখন গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল এবং বহু জিম্মি মুক্তি পেয়েছিল, তখন সেই প্রক্রিয়া ভেঙে দিয়ে নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এই সিদ্ধান্ত অনেকেই ‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ বলেও উল্লেখ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপে বহু ইসরায়েলি, বিশেষ করে জিম্মিদের পরিবার ক্ষুব্ধ হন। তাদের অভিযোগ, নেতানিয়াহু নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের প্রিয়জনদের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করছেন। গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধের সমাপ্তির অংশ হিসেবে একটি পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়ার অংশ ছিল জিম্মিদের মুক্তি। কিন্তু নেতানিয়াহু সেই প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেন এবং হামাস সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিবের এক জরিপে দেখা গেছে, ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের যুদ্ধ নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তায় বড় কোনো উত্থান আনতে পারেনি। তার দল লিকুদ পার্টি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, বরং ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করাও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
একই জরিপে আরও বলা হয়, ৫৯ শতাংশ ইসরায়েলি চান গাজায় যুদ্ধ এখনই বন্ধ হোক এবং জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে শান্তি ফিরুক। এছাড়া ৪৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, নেতানিয়াহু শুধু নিজের রাজনৈতিক স্বার্থেই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো প্রফেসর তামার হারম্যান বলেন, নেতানিয়াহু একজন অত্যন্ত দক্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ইসরায়েলে তার চেয়ে দক্ষ রাজনীতিবিদ আর নেই। কিন্তু আস্থা নেতানিয়াহুর জন্য একটি বড় সমস্যা। তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বারবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন, তাকে ইসরায়েলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আর বিশ্বাস করে না।
ইসরায়েল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের নতুন জরিপ অনুযায়ী, নেতানিয়াহু ইসরায়েলিদের পূর্ণ বা আংশিক আস্থার ৫০ শতাংশ সীমা অতিক্রম করতে পারেননি। প্রফেসর হারম্যান বলেন, ইরানে সামরিক অভিযানের তুলনায় আগাম নির্বাচনের ডাক দেওয়া নেতানিয়াহুর জন্য আরও বড় ঝুঁকি, কারণ মধ্যপ্রাচ্যে ছয় মাস পর কী হবে তা কেউ জানে না।
মন্তব্য করুন