ইরান এখনো তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক পরিদর্শন মেনে নেয়নি এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণও বন্ধ করেনি। এ দাবি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি কখনোই তেহরানকে এ পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় চালু করতে দেবেন না।
আল জাজিরার এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে শুক্রবার (৪ জুলাই) ট্রাম্প বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি স্থায়ীভাবে পিছিয়ে পড়েছে। যদিও তিনি স্বীকার করেন, ইরান অন্য কোথাও নতুনভাবে এ কর্মসূচি শুরু করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যদি তারা অন্য কোথাও আবার শুরু করে, তাহলে সেটি বড় সমস্যা হবে।
ট্রাম্প জানান, আসছে সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার বৈঠকে ইরান ইস্যুটি আলোচনার শীর্ষে থাকবে। এ সময় গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাও আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানি কর্মকর্তারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান।
শুক্রবার আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, তারা ইরান থেকে তাদের পরিদর্শক দল প্রত্যাহার করেছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি জানায়।
অপরদিকে ইরানের দাবি, তারা শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অভিযোগ, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বিভক্ত।
আইএইএ-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে পরিদর্শন পুনরায় শুরুর বিষয়ে আলোচনার এখনই সময়। দেরি হলে আস্থা ফেরানো কঠিন হবে।’
উল্লেখ্য, গত মাসে ইরানের পার্লামেন্ট একটি বিল পাস করে, যেখানে আইএইএ-এর সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ইতোমধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে আইএইএ জানিয়েছে, এখনো ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি।
এর আগে, গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ৩টি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এর আগে ইসরায়েল ১২ জুন থেকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা শুরু করে। ওই হামলার আগের দিন আইএইএ ইরানের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস করে, যেটি তেহরানকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এই হামলার পর থেকেই IAEA পরিদর্শকরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ঢুকতে পারছেন না।
ইউরেনিয়াম কোথায়?
মার্কিন দাবি অনুযায়ী, হামলায় ইরানের ৩টি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্রায় ৯ টন সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব এবং অবস্থান এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
এর মধ্যে অন্তত ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ- যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ মাত্রার কাছাকাছি। যদিও এটি এখনো অস্ত্র-মান নয়, তবুও আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার চূড়ায় পৌঁছেছে। আইএইএ-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং পরিদর্শক প্রত্যাহার পারমাণবিক স্বচ্ছতার প্রশ্নে বড় ধাক্কা। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।
মন্তব্য করুন