জর্জিয়ার আটালান্টায় গত ১০ মার্চ নির্বাচনী প্রচারণায় ভাষণ দিচ্ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনকে ডিক্টেটর বলছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময় বাইডেনকে থামিয়ে দেন এক ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারী।
তিনি বলেন, তুমিই ডিক্টেটর জেনোসাইড জো, তোমার কারণে গাজায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।ফিলিস্তিনপন্থি ওই আন্দোলনকারীর তোপের মুখে পড়ে তটস্থ হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ওই ঘটনার পর থেকেই জেনোসাইড জো বা গণহত্যাকারী জো কথাটি বাইডেনের নামের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারীরা আমেরিকা এবং এর বাইরের বিভিন্ন বিক্ষোভে তাকে এই নামে আখ্যা দিয়েছেন।
এ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিক্ষোভ। আগামী নির্বাচনে বাইডেনের ফের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটির ছাত্র বিক্ষোভ। সেখান থেকেও বাইডেনকে ডাকা হচ্ছে— জেনোসাইড জো বলেই!
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাইডেন। সেখানে কোনো রাখঢাক ছাড়াই সাংবাদিক এরিন বার্নেট তাকে প্রশ্ন করেন— মি. প্রেসিডেন্ট ক্যাম্পাসগুলোয় চলমান ছাত্র আন্দোলন জেনোসাইড জো স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, আপনি কি তরুণ সেসব আমেরিকানদের কথা শুনেছেন?
জবাবে বিব্রতবোধ করা বাইডেন জানান, তাদের বাকস্বাধীনতা রয়েছে। তবে, বিদ্যমান আইন মানতে হবে বলেও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার অন্ধ সমর্থন দেওয়ায় এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বাইডেনের এই জেনোসাইড জো নামটি বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একশরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বিক্ষোভ।
এ সময় দুই হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের জোয়ারে কয়েক সপ্তাহ ধরে বাইডেন আগের চেয়ে আরও বেশি বাধার মুখে পড়ছেন বলে মনে হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, যা তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষের ঝড় বইয়ে দিয়েছে; যারা কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে।
এই তরুণরা এবং তাদের কাছাকাছি দৃষ্টিভঙ্গির অন্যান্য সংখ্যালঘু যেমন– লাতিন, এশিয়ান, আফ্রিকান-মার্কিন সম্প্রদায়ের সদস্যরা মূলত ডেমোক্র্যাট পার্টির ভোটার হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। তাদের সমর্থন বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি করতে সক্ষম, যা পেলে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন বাইডেন।
বিভিন্ন জরিপে বাইডেনের জনপ্রিয়তা অনেকাংশে কমেছে। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা কমার পেছনে একটি কারণ হলো গাজার যুদ্ধ। যেহেতু তরুণদের একটি বড় অংশ মনে করে, ইসরায়েলের পদক্ষেপগুলো ন্যায়সংগত নয়। মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ এর অনুমোদন দিয়েছিল। ৭১ শতাংশ অসম্মতি জানিয়েছিল এবং অসম্মতির পক্ষে তরুণদের অবস্থান।
মন্তব্য করুন