সাদ মুসা গ্রুপসহ ৫ প্রতিষ্ঠানকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার পর প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিষ্ঠানকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঘোষণার এটিই প্রথম নজির। গত বুধবার ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানা গেছে, সাদ মুসা গ্রুপ ও অপর সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস, এফএমসি ডকইয়ার্ড ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস মাল্টি ট্রেড কর্পোরেশন এবং ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেটকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা।
চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত খেলাপি নির্ধারণ ও এসব খেলাপির বিভিন্ন সুবিধা বাতিলের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করতে এপ্রিলের প্রথমভাগেই আলাদা ইউনিট গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পরবর্তী দুই ধাপ নিচের কোনো কর্মকর্তাকে এ ইউনিটের প্রধান করতে বলা হয়। ইউনিটটির কাজ- খেলাপি ঋণের মধ্যে থাকা বেনামি, জাল জালিয়াতি করে নেওয়া ঋণ, প্রতারণা ও ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা ঋণও ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা ।
প্রজ্ঞাপনের বিধান অনুযায়ী, এই ৫ প্রতিষ্ঠানে জড়িত কর্মকর্তারা বিদেশ ভ্রমণ এবং ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞায় পড়বেন। একইসঙ্গে বাড়ি, গাড়ি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে। এছাড়া ঋণ পরিশোধের পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবে না ইচ্ছাকৃত খেলাপী হওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নীতিমালা জারির পর প্রথম ব্যাংক হিসেবে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করল ন্যাশনাল ব্যাংক।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে নেওয়া সাদ মুসা গ্রুপের ঋণ দীর্ঘদিন থেকেই খেলাপি। প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণ ২ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলসও পাওনা পরিশোধ করছে না। রাজধানীর দিলকুশা শাখা থেকে নেওয়া এই ঋণের বর্তমান স্থিতি ৯৮৭ কোটি টাকা। একই শাখা থেকে নেওয়া এফএমসি ডকইয়ার্ডের ঋণও আদায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এই ইচ্ছাকৃত খেলাপি থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের পাওনা ১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। এমনকি এফএমসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস মাল্টি ট্রেড কর্পোরেশনও দিলকুশা শাখা থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করছে না। এই প্রতিষ্ঠানটির কাছে আটকা ৩৭৬ কোটি টাকা।
রাজধানীর মহাখালী শাখা থেকে ৭৪১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়ে পড়েছে ব্রডওয়ে রিয়েল এস্টেট। এই প্রতিষ্ঠানটিও ইচ্ছাকৃত খেলাপি বলে মনে করে ন্যাশনাল ব্যাংক।