ঈদের আগে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকা তোলার বাড়তি চাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার বিকল হয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার ব্যাংকের ক্লিয়ারিংয়ের ধারণক্ষমতার ১০ গুণ বেশি লেনদেন করতে হয়েছে। বাড়তি লেনদেন করতে গিয়েই সার্ভার বিকল হয়ে পড়ে। ফলে এদিন খুব বেশি লেনদেন করা সম্ভব হয়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
দেশের আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি) টাকা তোলার চাপ বাড়ায় সুদহারও বাড়ছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের কারণেও কলমানিতে ধারের পরিমাণ বাড়ছে। গতকাল ১৪ দিন মেয়াদি আমানতের সুদহার প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। আর এক দিন মেয়াদি আমানতের সুদহার উঠেছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশে। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের জন্য সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করে দিয়েছে। যদিও আগামী ১ জুলাই থেকে ঋণের সুদহারের এই সীমা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেই স্বল্প মেয়াদি আমানত নিতে ব্যাংকগুলোকে প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলো নিজেদের নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) সংরক্ষণ করতে উচ্চসুদ দিয়ে হলেও তারল্য ধার করতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের মতে, ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবৃদ্ধি অনেক কম। অনেক ব্যাংকের আমানত আগের বছরের একই সময়ের চেয়েও কমে গেছে। এর ফলে কিছু ব্যাংক নিজেদের সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের শাস্তি থেকে বাঁচতে ওই ব্যাংকগুলো যে কোনো মূল্যে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে অর্থ ধার করছে। এতে দেশের মুদ্রাবাজার আরও বেশি অস্থির হয়ে উঠেছে। কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জানা গেছে, কলমানি বাজারের সুদহার ৯ শতাংশ হলেও ব্যাংকগুলোর সাধারণ গ্রাহকদের মেয়াদি আমানতের সুদহার এখনো অনেক কম। দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের তিন থেকে ছয় মাস মেয়াদি আমানতের জন্য ৪ থেকে ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। মেয়াদ ও অর্থের পরিমাণ বেশি হলে আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবছরই ঈদুল আজহার আগে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের নগদ টাকা তোলার হার অনেক বেড়ে যায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আর এ কারণেই কলমানিতে সুদহারও কিছুটা বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আমাদের ক্লিয়ারিংয়ের নিয়মিত ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৫ হাজার টি। সেখানে গতকালই আসছে ৪৭ হাজার। অর্থাৎ ক্লিয়ারিংয়ে ১০ গুণ বেশি চাপ বেড়েছে। এর বিপরীতে গতকাল ৩৬ হাজার পর্যন্ত ক্লিয়ার করতে পেরেছি। আর বাকিগুলো করার আগে আমাদের সার্ভারে ত্রুটি দেখা দেয়। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, কী পরিমাণ চাপ পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ঈদের আগে প্রতিবছরই ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেও সুদহার কিছুটা বাড়ে। এটা তো গরু কেনার ঈদ। আর গরু কিনতে অনেক টাকা দরকার। ঈদের আছে আর মাত্র এক দিন। এই অবস্থায় আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে উত্তাপ বাড়া খুব স্বাভাবিক। তারল্য সংকটের কারণে সুদহার বাড়ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে সুদহার বাড়ার সঙ্গে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের কোনো সম্পর্ক নেই। সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে বর্তমানে কোনো তারল্য সংকটও নেই। সার্ভার ঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা ঠিক করার কাজ চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গতকাল কলমানি বাজার থেকে এক দিন মেয়াদি অর্থ ধার করা হয়েছে ২ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা।
মন্তব্য করুন