বিশ্ববেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাশিয়াকে রুখতে অস্ত্রের জন্য মরিয়া ইউরোপ

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
রাশিয়াকে রুখতে অস্ত্রের জন্য মরিয়া ইউরোপ

রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে মারাত্মক প্রতিরক্ষা সংকটে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো। এ পরিস্থিতিতে তারা নিরাপত্তা হুমকি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে শুরু করেছে। তার প্রমাণ— ইউরোপীয় কমিশনের সিকিউরিটি অ্যাকশন ফর ইউরোপ (সেফ)। এরই অংশ হিসেবে ইউরোপজুড়ে শুরু হয়েছে অভূতপূর্ব অস্ত্র কেনার প্রতিযোগিতা।

চলতি বছরের মে মাসে ইউরোপীয় কমিশন চালু করে ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর সেফ তহবিল। এটি ইইউ সদস্যদের কম সুদে প্রতিরক্ষা বিনিয়োগের জন্য ঋণ দেয়। সদস্য দেশগুলোর সামরিক সক্ষমতার ঘাটতি পূরণ এবং যৌথ সামরিক ক্রয়ের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করাই এই তহবিলের লক্ষ্য।

সমালোচকরা শুরুতে সন্দেহ করেছিলেন, এতে আগ্রহী দেশ পাওয়া যাবে কি না। কিন্তু ৩০ নভেম্বর সময়সীমা শেষে দেখা গেল, ২৭ সদস্যের মধ্যে ১৯ দেশই ঋণের জন্য আবেদন করেছে এবং পুরো তহবিল পূর্ণ হয়ে গেছে। পোল্যান্ড একাই আবেদন করেছে ৪৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ইউরোর জন্য।

সেফ ছাড়াও ইইউর প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর আরেকটি হাতিয়ার হলো ‘ন্যাশনাল এসকেপ ক্লজ’ (এনইসি)। এটি সদস্য দেশগুলোকে সামনের চার বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের ১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত সামরিক ব্যয়ের সুযোগ দেয় ঘাটতি-নিষেধাজ্ঞা না ভেঙেই। জার্মানিসহ এখন পর্যন্ত ১৬টি দেশ এতে যুক্ত হয়েছে। এই ধারাটি সক্রিয় হলে ইউরোপে আরও ৬৫০ বিলিয়ন ইউরো সামরিক খাতে ব্যয় বাড়তে পারে।

এদিকে, গত জুনে ন্যাটো বৈঠকে ইউরোপীয় সদস্যরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে সামরিক বাজেট জিডিপির ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশে নেওয়ার, পাশাপাশি প্রতিরক্ষা অবকাঠামোতে আরও ১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করার।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা পেন্টাগনের ‘গ্লোবাল পোসচার রিভিউ’ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরে সামরিক সক্ষমতা স্থানান্তর ও ইউরোপ থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউক্রেনকে দেওয়া অস্ত্রের খরচ ইউরোপকে বহন করতে বলেছে। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইউরোপের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।

লন্ডনভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ’ (আইআইএসএস) সতর্ক করেছে, রাশিয়া যুদ্ধ-অর্থনীতি গড়ে তোলায় ২০২৭ সালের মধ্যেই ইউরোপের জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি তৈরি হতে পারে। সংস্থার মহাপরিচালক বাস্টিয়ান গিগেরিখ জানান, ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যয় এবার পুরো ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যদের সমান হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রতিরোধ ইউরোপকে প্রস্তুতির জন্য একটি সুযোগ দিয়েছে। যুদ্ধ শেষ হলে সেই সুযোগ দ্রুত হারিয়ে যাবে।

আকাশভিত্তিক গোয়েন্দা সক্ষমতা, কৌশলগত পরিবহন, দূরপাল্লার নির্ভুল হামলা, হাইপারস্কেল ক্লাউড কম্পিউটিংসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ক্ষেত্রে ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। আইআইএসএসের হিসাব বলছে, এসব সক্ষমতা ইউরোপকে একা অর্জন করতে হলে খরচ হবে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার।

সাবেক ন্যাটো কর্মকর্তা কামিল গ্রাঁর মতে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো ইউক্রেনকে আরও শক্তিশালী সহায়তা দেওয়া, বিশেষ করে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং আকাশ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম। দ্বিতীয়ত, ইউরোপের নিজেদের সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠন, যার জন্য মহাদেশব্যাপী সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা দরকার, যা ড্রোন থেকে শুরু করে হাইপারসনিক মিসাইল পর্যন্ত প্রতিহত করতে সক্ষম।

তৃতীয় কাজ হবে, মার্কিন সক্ষমতার বিকল্প গড়ে তোলা। গ্রাঁ মনে করেন, ইউরোপ-পরবর্তী দশকের মধ্যে এর সবই করতে পারবে।

ইউরোপের ধীরগতির সামরিক ক্রয় প্রক্রিয়া ও দুর্বল শিল্পভিত্তি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সাল থেকে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা চুক্তির ৫৩ শতাংশ গেছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে, বাকি ৩৬ শতাংশ প্রধানত খরচ হয়েছে মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনায়।

কিন্তু আজকে যদি চুক্তি হয়, তবুও অস্ত্র সরবরাহে লাগবে দুই থেকে তিন বছর। সাত দেশের যৌথ প্রকল্প এলসা (ইএলএসএ) দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উদ্যোগ নিলেও ১৮ মাস পরও এখনো ঠিক করেনি কোনো মডেল তৈরি হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিল্পকে ‘কারিগরি উৎপাদন’ থেকে ‘শিল্প-স্কেলের’ উৎপাদনে যেতে হবে এবং প্রতিটি দেশের উচিত দ্রুত অর্ডার দেওয়া, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি গ্রহণে ঝুঁকি নেওয়া।

পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প দূতের বৈঠক: ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাব্য পথ নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার মস্কো গেছেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার পুতিনের সঙ্গে তাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

পুরো পোকরোভস্ক রাশিয়ার ‘দখলে’: রুশ কমান্ডাররা পুতিনকে পূর্ব ইউক্রেনের পোকরোভস্ক শহরের পুরোটা দখলে নেওয়ার কথা নিশ্চিতের পর উচ্ছ্বসিত প্রেসিডেন্ট একে ‘গুরুত্বপূর্ণ জয়’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই সাফল্য যুদ্ধের বৃহত্তর লক্ষ্য পূরণে মস্কোকে সহায়তা করবে। তবে কিয়েভ এ দাবি অস্বীকার করে বলেছে, তাদের সেনারা এখনো শহরটিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফ্লাইওভারের সিঁড়ির নিচে বৃদ্ধের মরদেহ

হঠাৎ মেট্রো চলাচল বন্ধ, কারণ জানাল ডিএমটিসিএল

সমালোচনার মুখে সুর পাল্টালেন টুইঙ্কল

৪ দিন পর নীলফামারী-রংপুর রুটে বাস চলাচল শুরু 

আইপিএল মিনি অকশনে কে এই মালয়েশিয়ান ক্রিকেটার

ঘরে ঢুকে নৃশংস হামলায় ফুফু নিহত, মুমূর্ষু ভাতিজি

একাই ৪৫০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক

ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে যে ভুল ধারণাগুলো আমাদের বেশি ক্ষতি করছে

২৫ বছর আগের চেয়ে বেশি ‘চাঙ্গা’ বলে বৈঠকেই ঘুম

ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জেড আই খান পান্না 

১০

শীত আরও বাড়বে কি না জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

১১

নওগাঁয় শীতের তীব্রতায় তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির ঘরে 

১২

জুলাই আন্দোলনে আহত না হয়েও প্রতি মাসে ভাতা তুলছেন যুবক

১৩

চিড়িয়াখানায় সিংহের কাছে গিয়ে প্রাণ হারাল কিশোর

১৪

দিনাজপুরে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.১ ডিগ্রি

১৫

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনসিপির সদস্য সচিব

১৬

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট

১৭

ইতিহাস বদলে দিল বাংলাদেশ, যা আগে কখনো ঘটেনি

১৮

মেহেদির রং না শুকাতেই নববধূ ইলমা বিধবা

১৯

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাকে শোকজ

২০
X