ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনার গ্রুপের বিদ্রোহ রাশিয়ার ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বড় দুই বিদ্রোহের ঘটনাকে আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে। ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর পতনের পর ক্রেমলিন এ পর্যন্ত দুবার বড় বিদ্রোহ দেখেছে। তবে দুবারই সেই বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছে।
১৯৯১-এর ব্যর্থ অভ্যুত্থান : ১৯৯১ সালের আগস্ট মাস। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার চার মাস আগের ঘটনা। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ ইউনিয়ন ভেঙে দিয়ে ১৫টি রাষ্ট্রকে আলাদা করে দেবে; কিন্তু এ পদক্ষেপ থামিয়ে দিতে কট্টরপন্থি কমিউনিস্টরা অভ্যুত্থান করেন। তবে ওই যাত্রায় বেঁচে যান গর্বাচেভ। গর্বাচেভ তখন ছুটিতে ছিলেন। ক্রিমিয়ায় তার গ্রামের বাড়ি। সেখানেই ছিলেন তিনি। ১৯ আগস্ট গর্বাচেভকে বন্দি করা হয়। এর পেছনে ছিল সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি। গর্বাচেভকে বন্দি করার পর মস্কোর রাস্তায় সেনারা নেমে আসেন। নেমে আসে ট্যাঙ্ক। এরপর তিন দিন ধরে চলে বিক্ষোভ। লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। সেই সময় মানুষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে মস্কোর পার্লামেন্ট ভবন। মূলত সেখান থেকে এ অভ্যুত্থানের চেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়। সেই সময় বড় ভূমিকা পালন করেন বরিস ইয়েলৎসিন। গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট। আর ইয়েলৎসিন তখন রুশ পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট। তিনি ওই অভ্যুত্থান নাকচ করে দিয়ে ভাষণ দেন।
ইয়েলৎসিনের এ ভাষণের পর দুদিনের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। অভ্যুত্থানকারীরা ব্যারাকে ফিরে গেলে এক দিন পর গর্বাচেভ মস্কোয় ফিরে আসেন। তবে এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়, গর্বাচেভের প্রভাব কমে এসেছে। আর অভ্যুত্থান ঠেকিয়ে দেওয়ায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন ইয়েলৎসিন। এর কয়েক মাসের মধ্যে সোভিয়েত ভেঙে যায়।
১৯৯৩ সালের রক্তপাত : গর্বাচেভের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঠেকিয়ে দেওয়া ইয়েলৎসিন এবার নিজে বিদ্রোহের মুখে পড়েন। এসব ঘটনা ঘটে ১৯৯৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবরের মধ্যে। ওই সময় কট্টরপন্থি কমিউনিস্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার রুতস্কয় এ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। এ ঘটনার জেরে ইয়েলৎসিনের নির্দেশে ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে পার্লামেন্টে হামলা চালানো হয় সেই সময়। রক্তাক্ত হয় পার্লামেন্ট ভবন। মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আইন পরিষদ ‘সুপ্রিম সোভিয়েত’ বিলুপ্তির আদেশে সেই সময় স্বাক্ষর করেছিলেন ইয়েলৎসিন। এ জন্য আইনসভার বৈঠক ডেকেছিলেন তিনি; কিন্তু পার্লামেন্টে ‘সুপ্রিম সোভিয়েত’ বিলুপ্তি নিয়ে আলোচনায় রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহ হয়। সেই সময় পার্লামেন্ট কমিউনিস্টদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারা ইয়েলৎসিনকে অপসারণ করতে ভোট দিয়েছিলেন। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার রুতস্কয় বিরোধী শিবিরে যোগ দেওয়ায় তাকে নেতা নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন ইয়েলৎসিনবিরোধীরা। এরই মধ্যে বিদ্রোহীরা মস্কো মেয়রের কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনেরও খানিক অংশের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ পরিস্থিতিতে ইয়েলৎসিনের নির্দেশে সেনারা গুলি চালায়। ৪ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটে। ১৮ তলা পার্লামেন্ট ভবন সেদিন রক্তে ভেসে গিয়েছিল। সরকারি হিসাব অনুসারে, ১৪৮ জন সেদিন নিহত হয়েছিলেন। তবে বিদ্রোহীরা বলে থাকেন, সেদিন আসলে নিহত হয়েছিলেন প্রায় এক হাজার মানুষ। এ ঘটনার পর বিদ্রোহী নেতাদের জেলে পাঠানো হয়েছিল। এ ঘটনার পর ওই বছরের ডিসেম্বরে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। এতে রুশ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানো হয়। অর্থাৎ রক্তপাতের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছিলেন ইয়েলৎসিন।
মন্তব্য করুন