বিশ্ববেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১০:২৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পুতিন কি বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বের হচ্ছেন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে দেওয়া ওয়াগনারের স্বল্প সময়ের বিদ্রোহের পর এই প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত মঙ্গলবার আঞ্চলিক সংস্থা সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বা সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) এ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি তিনি অংশ নেন। প্রায় একঘরে হয়ে পড়া রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেখা যায় না বললেই চলে। তার ওপর সাম্প্রতিক ওয়াগনারের বিদ্রোহ তাকে বিপৎসংকুল অবস্থায় ফেলে দেয়। এরকম অবস্থায় এসসিওর এ প্ল্যাটফর্ম থেকে পুতিন বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বের হয়ে আসছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

২০০১ সালে রাশিয়া, চীন, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের যৌথ উদ্যোগে এসসিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ভারত ও পাকিস্তান ২০১৭ সালে এর স্থায়ী সদস্য হয়। মঙ্গলবার সর্বশেষ ইরানকেও এর সদস্য করে নেওয়া হয়। এ নিয়ে জোটের সদস্য হলো ৯টি দেশ। এ জোটের বিশেষত্ব হলো, এটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ এককভাবে ধারণ করে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিশ্বের মোট জিডিপির ৩০ শতাংশ এককভাবে এ জোটের। জোটের মূল লক্ষ্য হলো, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো, মাদক পাচার ও সন্ত্রাসবাদ রোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলাসহ আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে জোর দেওয়া। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জোটের শীর্ষ সম্মেলন। প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ জোটটি কি রাশিয়া তথা পুতিনের জন্য ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে? কিংবা জোটটি কি পুতিন এবং রাশিয়াকে পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার মুখে একঘরে হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে?

জোটটির প্রকৃতি আসলে কী—তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে। কারণ এটিকে শুধু অর্থনৈতিক জোটও বলা যায় না, আবার সামরিক বা আঞ্চলিক (ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো) জোটও বলা যায় না। বিশ্লেষকদের ধারণা, ক্রমেই একটি বহু মেরুক বিশ্ব সৃষ্টি করে সেখানে নিজেদের স্বার্থরক্ষা করাই এ জোটের লক্ষ্য। মঙ্গলবার হয়ে যাওয়া এ সম্মেলনে চীন এবং রাশিয়া উল্লেখ করেছে যে, জোটটি শুধু আর্থিক খাতে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে আরও বেশি কিছু করার সক্ষমতা রাখে। একই কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে সদ্য সদস্য হওয়া দেশ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির কথাতেও।

যাহোক, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার মূল নিহিত ১৯৯৬ সালের ‘সাংহাই ফাইভ’ প্যাক্টে। এ চুক্তির মাধ্যমে সে সময় চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তানের সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছিল। সে সময়কার সাংহাই ফাইভ এখন ৯ দেশের জোটে রূপ নিয়েছে এবং জোটটি নতুন সমস্যা ইউক্রেন যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে। রাশিয়া এ সমস্যার সরাসরি অংশীদার।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর অবস্থান স্পষ্ট নয়। কারণ, কোনো দেশই সরাসরি এ যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষ নেয়নি; আবার রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের সমালোচনাও করেনি। রাশিয়ার সঙ্গে এ সদস্য দেশগুলোর স্বার্থ দারুণভাবে জড়িত। চীন ইউক্রেন আক্রমণের ঠিক আগে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সীমাহীন বন্ধুত্বের’ ঘোষণা দিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন দারুণভাবে বাড়িয়েছে। দুই দেশের প্রেসিডেন্টই সম্পর্ককে ‘নতুন যুগে’ নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রাশিয়ার আরেক বন্ধু ভারত, আপাতদৃষ্টিতে নয়াদিল্লি পশ্চিমা বিশ্বের কাছে গুরুত্ব বহন করে। তবে ভারত পশ্চিমা চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়ার তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি মস্কোর সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগও বজায় রেখেছে। এ ছাড়া ইউক্রেন বিষয়ে জাতিসংঘে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। জোটের নয়া সদস্য ইরান রাশিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান রাশিয়াকে বেশ বড় সংখ্যায় অ্যাটাক ড্রোন সরবরাহ করেছে। তবে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা মসৃণ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তা বলা যাবে না। কারণ, জোটের একাধিক দেশের মধ্যে গভীর সংকট বিদ্যমান। যেমন চীন ও ভারতের মধ্যে লাদাখ এবং অরুণাচলকে কেন্দ্র করে সংকট রয়েছে। আর এ সংকট এতটাই গভীর যে, দুটি দেশই একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। একই অবস্থা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। এর বাইরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশ এবং রাশিয়ার এক সময়কার মিত্র কাজাখস্তান সাম্প্রতিককালে মস্কো থেকে বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারীদের ৫ প্রতিশ্রুতি দিলেন তারেক রহমান

পাসপোর্ট জালিয়াতি, যে শাস্তি পেলেন সহকারী প্রোগ্রামার

তারেক রহমানের জন্মদিনে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

ব্রাজিলে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

রাফিয়ার বাড়িতে ককটেল-অগ্নিসংযোগ, ঢাবি শিক্ষক মোনামির প্রশ্ন

ঢাকার খাবারের ঝালে মজেছেন ইরানি ফাকরি

শেখ হাসিনা-কামালকে ফেরাতে সরকারের নতুন কৌশল

পুনরায় দুঃসংবাদ পেলেন বিএনপির এক নেতা

সেই বিচারকের মোবাইল ফোন ও চশমা উদ্ধার

তারেক রহমানের জন্মদিনে শীতবস্ত্র বিতরণ

১০

নিউমুরিং টার্মিনালের চুক্তির সব কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ

১১

সিলেটের যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবে না শুক্রবার 

১২

আ.লীগের ৫ শতাধিক সমর্থকের নামে চার মামলা, গ্রেপ্তার ২২

১৩

নির্বাচনের আগে ইসির ৯ কর্মকর্তাকে বদলি-পদায়ন

১৪

স্ত্রী হারালেন তোফায়েল আহমেদ

১৫

রাতে ৫৬ নেতাকে সুখবর দিল বিএনপি

১৬

মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসে গ্রেনেড, বাড়িতে নিয়ে যান কৃষক

১৭

ইতালি যাওয়ার পথে গোপালগঞ্জের দুই যুবকের মৃত্যু

১৮

জিম্বাবুয়ের কাছে লঙ্কানদের লজ্জার পরাজয়

১৯

প্রথমবারের মতো কৃত্রিম দ্বীপ বানাচ্ছে পাকিস্তান

২০
X