ক্যাম্পাসের লাইব্রেরিতে প্রতিনিয়তই ঘটে ঘটনা। মাঝেমধ্যে সেসব ঘটনা থেকে ঘটে বিপত্তি। বিভিন্ন ঘটনার সময় লাইব্রেরিতে উপস্থিত ছিলেন জুবায়ের ইবনে কামাল-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ পান না বিসিএস পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত আনাগোনার কারণে। এমনকি সকালে লাইব্রেরি খোলার আগেই ভোর থেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে। তাই লাইব্রেরির একটি টেবিল একবার দখল করলেন মাস্টার্সের একজন শিক্ষার্থী। তিনি নিয়ম চালু করলেন, এ টেবিলে বসতে হলে একটা অঙ্ক কষতে হবে। নবম কিংবা দশম শ্রেণির সেই অঙ্ক দুজন সমাধান করতে পারলেন। বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে পারলেন না। যারা সমাধান করতে পেরেছিলেন তাদের বসতে দেওয়া হলো। এখন ভাবতে পারেন কেন? যারা অঙ্ক সমাধান করতে পারেননি তারা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ছিলেন। বিসিএসের প্রস্তুতি নিলে তো সহজেই সমাধান করা যেত।
বিসিএসের পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতির কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করতে পারেন না, এ অভিযোগ অনেক দিনের। অভিযোগটা সত্য হলেও ভাবলাম, একবার ঢু মেরে দেখে আসি। গিয়েই দেখি বিরাট হট্টগোল। কী হয়েছে? পরে কাহিনি শুনে আমরা অবাক। একটা অচেনা ছেলে নাকি খাবার কিনতে এসে লাইব্রেরিতে ভুলে ঢুকে গিয়েছিল। সে লাইব্রেরিয়ানকে উচ্চৈঃস্বরে জিজ্ঞেস করে বসে, ‘চা, চপ, শিঙারা পাওয়া যাবে?’ তখন লাইব্রেরিয়ান তাকে সাবধান করে দেন, এটা একটা লাইব্রেরি। তখন ছেলেটি আস্তে আস্তে ফিসফিস করে বলল, ‘চা, চপ, শিঙাড়া হবে?’
এ ঝামেলাই ক্যাম্পাসের লাইব্রেরির একমাত্র ঝামেলা নয়। সেদিন লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখি দুজন বন্ধু সামনে বই খুলে বিরসমুখে বসে আছে। গায়ে তাদের ফরমাল পোশাক। বোঝাই যাচ্ছে, কোনো জায়গা থেকে ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছে। একজন বন্ধু বলছে, ‘দোস্ত কী হয়েছে, ইন্টারভিউ কি খারাপ হয়েছে? তুই তো সারা দিন লাইব্রেরিতে পড়তি।’ তখন অন্য বন্ধু জানায়, ‘আমার আগে যে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছে তাকে শুনলাম প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করছেন—ধরেন, আপনি ট্রেনে জার্নি করছেন। আপনার অনেক গরম লাগছে। আপনি কী করবেন?
চাকরিপ্রার্থী : ট্রেনের জানালা খুলে দেব।
অফিসার : বাহ, খুব ভালো। এখন বলুন, জানালার ক্ষেত্রফল ১.৫ বর্গমিটার, ট্রেনের কামরার ঘনফল ১৩ ঘনমিটার, পশ্চিম দিকে ট্রেনের গতিবেগ ৮০ কিমি/ঘণ্টা এবং হাওয়ার গতিবেগ দক্ষিণ দিকে ৫ মাইল/সেকেন্ড হলে ট্রেনের কামরা ঠান্ডা হতে কত সময় লাগবে?
চাকরিপ্রার্থী কোনো উত্তর দিতে পারেনি। আমি ঢোকার পরও দেখলাম, একই প্রশ্ন করেছেন। তখন আমি উত্তর দিয়েছি অন্যভাবে।
অফিসার : মনে করুন, আপনি ট্রেনে জার্নি করছেন। আপনার বেশ গরম লাগছে। আপনি কী করবেন?
আমি উত্তর দিলাম—কোট খুলে ফেলব।
অফিসার : তারপরও গরম লাগলে কী করবেন?
আমি : জামা খুলে ফেলব।
অফিসার : তারপরও গরম লাগলে?
আমি : প্যান্ট খুলে ফেলব।
অফিসার : (বিরক্ত হয়ে) তারপরও গরম লাগলে?
আমি : বাকি সব খুলে ফেলব।
অফিসার : (রেগে গিয়ে) তারপরও যদি গরম লাগে?
আমি : স্যার, আমি গরমে মরে যাব, কিন্তু ট্রেনের জানালা খুলব না!
তাদের এ কথোপকথন শুনে মনে হলো, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জায়গা না দিয়ে লাইব্রেরিতে জায়গা দখল করে থাকলে এমন তো হবেই।
মন্তব্য করুন