৫ জুন দিনটি ছিল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ওরফে পাবিপ্রবি দিবস। সকালে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক পেরোতেই পায়ের কাছে চোখ আটকে গেল রঙিন চিত্রকর্মে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে কারুকাজটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়েরই চিত্রকলা সংগঠন ‘চিত্র’।
সকাল সাড়ে ১০টা। অনুষ্ঠানও শুরু। প্রথমে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হলো। এ পর্বে রোভার স্কাউট ও ক্যাম্পাসের আনসার সদস্যদের একটি অসাধারণ প্যারেড হয়ে গেল। শুরু হলো আনন্দ শোভাযাত্রা। মুহূর্তে রঙিন হয়ে উঠল কেন্দ্রীয় মাঠের পশ্চিমপাশ। গানের তালে মিনিট দশেক চলল ফ্লাশমব। পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের আয়োজনে চলছে ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ও ব্লাড ডোনেশন কার্যক্রম। সেখানে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন—উৎসর্গ ও জোনাকি।
নাজমুস শাকীব সিজান ও সঞ্চিতা মহন্তের সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভা শুরু হলো। একে একে বক্তারা তথ্যবহুল ও মজার বক্তৃতা দিলেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন ঘোষণা দিলেন, ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন হবে। এ ছাড়াও দুটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি (ফার্মেসি ও কম্পিউটার) তৈরির প্রত্যাশা জানালেন।
গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখায় সম্মাননা স্মারক পেলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুনুর রশিদ, ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইসিই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লিটন চন্দ্র পাল এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ফাতিন ইশরাক। গত এক বছরে বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত আর্টিকেল সংখ্যা, ইমফ্যাক্ট ফ্যাক্টর, বাইরের ফান্ডিং এবং সাইটেশনের ওপর ভিত্তি করে এ তিন সেরা গবেষককে নির্বাচিত করা হয়েছে।
এদিকে স্নাতকে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেলেন বিভিন্ন বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থী। ওই কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৪-১৫ সেশনের আছেন—ইইই বিভাগের মো. মেহেদী হাসান তানিম, আইসিই বিভাগের মো. মারুফ হোসেন ও একই বিভাগের তাহসীনা নাজনীন, ব্যবসায় প্রশাসনের নাজমুল হক সাগর। ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীরা হলেন—ফার্মেসি বিভাগের মো. সেলিম উদ্দিন, মোছা. সোহেলী আক্তার নিফা ও একই বিভাগের সুমি খাতুন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মো. নাদিম মাহমুদ নবীন ও একই বিভাগের শারমিন আক্তার, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের হাসিবুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের মো. রিপন হোসাইন, সমাজকর্ম বিভাগের অপর্ণা রানী, একই বিভাগের মোছা. মঞ্জিলা পারভীন এবং ইইসিই বিভাগের মোছা. মার্জিয়া খাতুন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিশেষ অনুদান প্রদান করা হয়।
সাংস্কৃতিক পর্ব
বিকেল গড়াতেই ক্যাম্পাসে সাজ সাজ রব। সিনিয়র-জুনিয়র ও প্রিয়জনদের নিয়ে সবাই সেজেগুজে সাংস্কৃতিক পর্ব উপভোগ করতে হাজির। কেউ মাঠে আড্ডায় মেতেছে, কেউ মুক্তমঞ্চের সিঁড়িতে। স্নিগ্ধতার স্পর্শ পেতে কেউ বসেছে আনন্দ সরোবরের সিঁড়িতে। ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবের আমেজ। সাংস্কৃতিক পর্বের সঞ্চালনায় ছিল সৈয়দ ইয়ানুর শাহ ও ফাইরুজ ফারিহা। সঙ্গে প্রথম পর্বের সিজান ও সঞ্চিতা। শুরুতে পাস্ট ডিবেটিং সোসাইটির আয়োজনে ছিল ছাত্র-শিক্ষক বিতর্ক। বিতর্কের বিষয়— ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেকাল নয়, একালই সেরা’।
উৎসব আরও জমজমাট হলো অনিরুদ্ধ নাট্যদল, কণ্ঠস্বর আবৃত্তিদল ও পাস্ট ড্যান্স ক্লাব সদস্যদের পরিবেশনায়। ছিল ছোট্ট নাটিকা ও রম্য অভিনয়। শেষ আকর্ষণ ছিল ক্যাম্পাসের ব্যান্ডদল ডেসট্রয়েডের পারফরম্যান্স।
মন্তব্য করুন