ভোলার লালমোহন উপজেলার ২৭টি আবাসনে অন্তত ১ হাজার ৯০০ পরিবার চরম দুর্ভোগে রয়েছে। এসব আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে কেউ দিনমজুর, কেউ শ্রমিক, কেউ অটোরিকশা চালক, আবার কেউ জেলে। এখানে নিম্নবিত্তদের বসবাস। ২০০৩ সাল থেকে শুরু করে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে টিনশেড এসব আবাসন নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কয়েক বছর পর থেকে আবাসনের ঘরগুলো জরাজীর্ণ হতে শুরু করে। বর্তমানে এসব আবাসনের ঘরের অবস্থা খুবই নাজুক। জরাজীর্ণ আবাসনের বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লালমোহনের বদরপুর ইউনিয়নে চারটি আবাসনের ব্যারাক রয়েছে। দুটি আবাসনের ব্যারাক এরই মধ্যে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। বাকিগুলো জরাজীর্ণ। কালমা ইউনিয়নে রয়েছে একটি আবাসন। সেটিও জরাজীর্ণ। ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের তিনটি আবাসনের মধ্যে দুটির কাজ নতুন করে করা হয়েছে। তবে এখনো একটি আবাসন জরাজীর্ণ। ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নেও তিনটি আবাসন রয়েছে। এর সবগুলোই জরাজীর্ণ। লালমোহন ইউনিয়নে একটি আবাসন রয়েছে, তাও জরাজীর্ণ। পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নে রয়েছে ছয়টি আবাসন; যার সবগুলোই জরাজীর্ণ। রমাগঞ্জ ইউনিয়নে রয়েছে দুটি আবাসন। ওই দুটিও জরাজীর্ণ। সবচেয়ে বেশি আবাসনের ঘর রয়েছে উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নে মোট আবাসন রয়েছে ১১টি। যেখানের সবগুলো ঘরই জরাজীর্ণ। এসব জরাজীর্ণ ঘরে বর্তমানে ১ হাজার ৯০০ পরিবার বাস করছেন।
সরেজমিন লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পূর্ব কচুয়াখালী আবাসনে গিয়ে দেখা গেছে, এই আবাসনের প্রতিটি ঘরই জরাজীর্ণ। কোনো রকমে দিনপার করতে টিনশেড ঘরগুলোর ওপর বাসিন্দারা দিয়েছেন তেরপাল ও পলিথিন। তবুও বৃষ্টি হলে রক্ষা মেলে না এখানের বাসিন্দাদের। বৃষ্টির পানি ভেতরে পড়ে ভিজে যায় ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস ও আসবাব। অধিক বৃষ্টিতে কখনো কখনো ঘরগুলো পানিতে টইটুম্বুরও হয়ে যায়। তবে এই আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে কেউ কেউ ধারদেনা করে নিজেরা ঘরগুলোকে মেরামত করে নিয়েছেন। আর বাকিরা রয়েছেন চরম দুর্ভোগে।
ওই আবাসনের বাসিন্দা মো. আবু মিয়া এবং মো. সফিজল ইসলাম বলেন, আমরা অসহায় মানুষ। তাই আবাসনে আমাদের ঘর দেওয়া হয়েছে। তবে ঘরগুলো নির্মাণের পর থেকে বেশ কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও মেরামত করা হয়নি। এসব ঘর এখন খুবই জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই ভেতরে পানি পড়ে। এর থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে ভাঙা টিনের ছাউনির ওপর তেরপাল এবং পলিথিন দেওয়া হয়েছে। তবে বেশি বৃষ্টি হলে পানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না। ঘরের বেড়ার টিনগুলোও এখন মরীচিকা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। এখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এখন ঘরগুলো মেরামতের অবস্থায় নেই। তাই এই আবাসনের ঘরগুলো পুনর্নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ ঘোষ জানান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আবাসনের টিনশেড এসব ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। তবে নির্মাণের কয়েক বছর পরও মেরামতের উদ্যোগ না নেওয়ায় ঘরগুলো এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে করে বাসিন্দারা ব্যাপক দুর্ভোগে রয়েছেন। তাদের এই দুর্ভোগ লাঘবের জন্য আমরা এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ৪৩৮টি ঘরের তালিকা পাঠিয়েছি। যার মধ্যে ১৬৩টি ঘরের বরাদ্দ পেয়েছি। এসব ঘরের কাজ এখন প্রায় শেষের দিকে। এ ছাড়া বাকি ঘরগুলোও পুনর্নির্মাণের জন্য পর্যায়ক্রমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকা পাঠানো হবে। বরাদ্দ পেলে বাকি ঘরগুলোরও কাজ শুরু করা হবে।