যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে যেসব খাদ্যপণ্য আমদানি হচ্ছে, তা এখন থেকে সন্ধ্যা ৭টার পর আর খালাস না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। যার ফলে আসন্ন পবিত্র রমজানে ভারত থেকে আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব পণ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাড় দেওয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. আব্দুল হাকিমের মৌখিক নির্দেশনায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের নির্দেশনা প্রত্যাহার না করা হলে বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি কমে যাবে। তা ছাড়া রমজানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি সরকার হারাবে রাজস্ব।
জানা গেছে, পবিত্র রমজান সামনে রেখে ভারত থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন দুই শতাধিক খাদ্যবোঝাই পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে আসছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, চাল, ডাল, ভুট্টা, গম, আপেল, কমলা, বেদানা, মাল্টা, আঙুরসহ নানাবিধ পণ্য। গত এক মাসে প্রায় ৪৭ হাজার টন এসব খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। তা ছাড়া প্রতিদিনই এ যাতীয় পণ্য আমদানি হচ্ছে বন্দর দিয়ে। বন্দরে এসব পণ্য প্রবেশের পর কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছাড় দিয়ে আসছিল রমজান মাস সামনে রেখে। কিন্তু হঠাৎ করে গত বৃহস্পতিবার থেকে এসব পণ্য সন্ধ্যা ৭টার পর আর খালাস দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। ফলে কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে এসব পণ্য ছাড় নেওয়া ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে তারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যপণ্য খালাসের দায়িত্বে থাকা কাস্টমসের রেভিনিউ অফিসার (আরও) শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, সন্ধ্যা ৭টার পর খাদ্যপণ্য খালাস না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে কমিশনারের। মৌখিক না লিখিত নির্দেশনা—এ প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা জানান, মৌখিক।
জানা গেছে, বেনাপোল দিয়ে যেসব খাদ্যপণ্য আমদানি হয়, তা আগে দিনে দিনে খালাস হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন খাদ্য মোকামে পৌঁছে যেত। তবে কমিশনারের এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে তা আর সম্ভব হবে না। বিশেষ করে রোজার মধ্যে এসব ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও বাজারদর স্বাভাবিক রাখতে হলে এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কাস্টমস কর্মকর্তাদের নমনীয় হতে হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
সূত্রে জানা যায়, রমজানে যেসব ভোগ্যপণ্যের চাহিদা রয়েছে, এসব পণ্যের মধ্যে ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, মসুরডাল, আদাসহ বিভিন্ন ধরনের ফল। এসব পণ্যে যাতে সরবরাহ ও বাজারদর স্বাভাবিক থাকে, সেজন্য এলসি খোলা সহজ করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। যার ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বেড়েছে। এতে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ছে। রমজান মাসে এসব পণ্যের দাম বাজারে কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা।
বেনাপোলের এক ব্যবসায়ী জানান, বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তা ছাড়া যেখানে বন্দর থেকে পণ্য খালাস হয় সারারাত, সেখানে শুধু ভোগ্যপণ্য খালাসের বেলায় সময়সীমা বেঁধে দেওয়াটা অযৌক্তিক।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, বেনাপোল বন্দরে প্রতিদিনি ভারত থেকে যেসব খাদ্যবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তা নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশে পৌঁছায় না। সে কারণে এসব পণ্যবাহী ট্রাক থেকে পণ্য খালাসে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় ব্যবসায়ীদের।