অর্থনীতি, কৃষি ও সামাজিক বিভিন্ন সূচকের মতো সরকারিভাবে দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করতে চায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। নাগরিকরা সরকারি সেবা পেতে কী ধরনের দুর্নীতির মুখোমুখি হয়, তা জানতে জরিপ পরিচালনা করতে চায় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি। তবে এতে আপত্তি জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার শেরেবাংলা নগরীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় পরিসংখ্যান উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জরিপের কথা জানায় বিবিএস। তবে পরিষদের সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান ও বিআইডিএসের মহাপরিচালক দুর্নীতির শব্দটিতে আপত্তি জানিয়ে তা বদলানোর পরামর্শ দেন।
সভায় জানানো হয়, সরকারের গত মেয়াদে জাতীয় পরিসংখ্যান উপদেষ্টা পরিষদের শেষ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল সুশাসন নিশ্চিত করতে নাগরিকদের ওপর জরিপ পরিচালনা করবে বিবিএস এবং তার ভিত্তিতে দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করা হবে। সেই সভার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরেন বিবিএসের কর্মকর্তারা। বিবিএস জানায়, বিবিএসের অন্য জরিপের মতো করেই এটা করা হবে। এটার জন্য একটি প্রশ্নপত্র থাকবে। এর আগে একটি প্রিটেস্ট হবে। তারপর জরিপ পরিচালনা করা হবে। তবে এ নিয়ে আপত্তি তোলা হয়।
সভায় এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘আমি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, আমি দেখতে চাচ্ছি অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোথায় দুর্নীতি বা হয়রানি হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে। নিজেরা নিজেরাই এটা দেখতে চাচ্ছি, আইডেন্টিফাই করতে চাচ্ছি। এটি খুবই সেনসেটিভ কাজ।’ তিনি বলেন ‘এটা করতে পারি, তবে দুর্নীতি শব্দের পরিবর্তে অন্য একটি শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে।’
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা-বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়েক সেন মনে করেন, সরকারের বিরোধী পক্ষ এর সুযোগ নিতে পারে। পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম বলেন, বিষয়টি খুব সেনসেটিভ। দুর্নীতির সম্পর্কে ঢালাওভাবে কথা বললে সমস্যা আছে। আমি বুঝতে পারছি না এই সার্ভেতে কী পাবে। আমার জানা নেই। তিনি বলেন এ ধরনের কোনো রিপোর্ট আমার চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপে উঠে এসেছে যে, আমাদের সব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি আছে। সেবা দিচ্ছে না এবং সেবার বিনিময়ে টাকা নিচ্ছে। সরকার মনে করছে সরকারের কাছে যেসব তথ্য দেওয়া হয় সেটি সরকারকে হেয় বা ছোট করার জন্য করা হচ্ছে। এটি ঠিক নয়। তবে বিবিএস মানদণ্ড বজায় রাখবে, এটি আমরা প্রত্যাশা করব, যাতে এ ধরনের জরিপ কোনো প্রশ্নবিদ্ধ হতে না পারে। জরিপ করার মতো সক্ষমতা বিবিএসের রয়েছে বলে আমরা আশা করি।