

বৈধভাবে মোবাইল ফোন আমদানির শুল্ক হার কমানোর বিষয় নিয়ে এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি যৌথভাবে বৈঠক করেছে। এই বৈঠক (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সচিবালয়ের অফিস কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসীরা দেশে ছুটি কাটানোর সময় সর্বোচ্চ ৬০ দিন পর্যন্ত স্মার্টফোন রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ব্যবহার করতে পারবেন। ৬০ দিনের বেশি থাকলে মোবাইল ফোন রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। যাদের বিএমইটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড আছে, তারা ফ্রিতে মোট তিনটি ফোন আনতে পারবেন- নিজের ব্যবহারের ফোনসহ অতিরিক্ত দুটি নতুন ফোন। চতুর্থ ফোনে কর দিতে হবে। বিএমইটি কার্ড না থাকা প্রবাসীরা নিজের ব্যবহারের ফোনের সঙ্গে অতিরিক্ত একটি ফোন ফ্রিতে আনতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে মোবাইল ক্রয়ের বৈধ কাগজ সঙ্গে রাখতে হবে। কারণ মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যের বিমানবন্দরগুলোতে চোরাচালানকারীরা প্রবাসীদের চাপ দিয়ে স্বর্ণ, দামি মোবাইল ইত্যাদির শুল্কহীন পাচারে লিপ্ত থাকে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, স্মার্টফোনের বৈধ আমদানি শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হবে, ফলে বৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল ফোনের দাম কমবে। বর্তমানে বৈধ পথে মোবাইল আমদানির শুল্ক প্রায় ৬১ শতাংশ। শুল্ক কমানো হলে দেশের ১৩-১৪টি ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনকৃত মোবাইলের শুল্ক ও ভ্যাটও কমানো হবে। বিটিআরসি ও এনবিআর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিকবার বসে আমদানি এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের শুল্ক সমন্বয় নিয়ে কাজ শুরু করেছে। মন্ত্রণালয় আশা করছে, এ উদ্যোগ দেশের ডিভাইস ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনুকূল ফল দেবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আপনার অজান্তেই কেউ আপনার নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করছে কি না সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যে কোনো সাইবার অপরাধ, অনলাইন স্ক্যামিং, অনলাইন ও মোবাইল জুয়া, মোবাইল ব্যাংকিং জনিত অপরাধে আপনার নামে নিবন্ধিত সিমটি ব্যবহৃত হচ্ছে কি না—সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। অপরাধ এবং রেজিস্ট্রেশন ঝামেলা এড়াতে সবসময় নিজের নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করুন। বাংলাদেশে ক্লোন মোবাইল, চুরি/ছিনতাই করা ফোন এবং রিফারবিসড মোবাইল আমদানি বন্ধ করা হবে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৬ ডিসেম্বরের আগে বাজারে অবৈধভাবে আমদানি করা স্টক ফোনগুলোর মধ্যে যেগুলোর বৈধ IMEI নম্বর আছে, সেই IMEI লিস্ট বিটিআরসিতে জমা দিয়ে হ্রাসকৃত শুল্কে সেগুলোকে বৈধ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ নিয়ে এনবিআর-এর সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে ক্লোন ফোন এবং রিফারবিশড ফোনের ক্ষেত্রে এই সুবিধা দেওয়া হবে না।
বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যবহৃত সচল মোবাইল ফোন কোনোভাবেই ১৬ ডিসেম্বরের আগে বন্ধ হবে না। এই সংক্রান্ত গুজব থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর থেকে NEIR চালু হবে, তাই বৈধ IMEI নম্বরবিহীন হ্যান্ডসেট কেনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে আমদানি করা, চোরাচালানকৃত এবং ক্লোন ফোন বাংলাদেশে বন্ধ করা হবে। দেশে বিদেশের পুরোনো ফোনের ডাম্পিংও বন্ধ হবে। কেসিং পরিবর্তন করে এসব ইলেকট্রনিক বর্জ্য দেশে আনা ও এর মাধ্যমে চোরাকারবারি ব্যবসা চালানো বন্ধ করা হবে।
বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে ভারত, থাইল্যান্ড, চীন থেকে আসা ফ্লাইটগুলো শনাক্ত করা হচ্ছে এবং দ্রুত কাস্টমস থেকে অভিযান চালানো হবে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ (সংশোধনী) ২০২৫ মোবাইল সিমের eKYC এবং IMEI রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ডেটার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। নতুন ধারা যুক্ত করে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত তথ্য লঙ্ঘনকারীদের অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে। তাই অযথা ভয় ও গুজবের প্রতি কান না দেওয়ার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন