

আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যতটা শরীরের যত্ন নেওয়া। ব্যস্ত জীবনে আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না আমাদের ভেতরে কী চলছে। মাঝে মাঝে জিনিসগুলো খারাপের দিকে গেলেও তা বুঝতে দেরি হয়ে যায়।
মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা অনেকভাবে দেখা দিতে পারে, আর প্রথম দিকে লক্ষণগুলো চিনে ফেলতে পারলে বড় সমস্যা হওয়ার আগেই পদক্ষেপ নেওয়া যায়। আপনার চিন্তা, অনুভূতি আর আচরণে পরিবর্তনগুলো খেয়াল করলেই এসব সংকেত ধরা যেতে পারে।
এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা করলে পরে বড় ঝামেলায় পড়তে হতে পারে, তাই নিজের ভেতরের অনুভূতিগুলো নিয়ে সচেতন থাকা খুব জরুরি।
আজ এমন পাঁচটি রেড ফ্ল্যাগ বা নেতিবাচক সংকেত জানিয়ে দেওয়া হলো, যেগুলো আপনার মানসিক স্বাস্থ্যে ঝুঁকি তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।
হঠাৎ যদি ঘুমাতে সমস্যা হয় বা ঘুম ধরে না, তাহলে সেটা কোনো সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। রাতে বিছানায় শুয়ে থাকলেও ঘুম না আসা, বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া বা মাথা বন্ধ না হওয়ার মতো অনুভূতি হলে বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।
অন্যদিকে, যদি আগের চেয়ে অনেক বেশি ঘুমান কিন্তু তারপরও ক্লান্ত বোধ করেন, সেটাও শরীরের এক ধরনের সতর্কবার্তা। খারাপ ঘুম শুধু ক্লান্তিই আনে না—এটি আপনার মেজাজ, শক্তি আর পুরো দিনের মানসিক অবস্থাকেও প্রভাবিত করে। তাই ঘুমের অভ্যাসে যে কোনো পরিবর্তন খেয়াল করা জরুরি।
যেসব কাজ বা শখে আগে আনন্দ পেতেন, সেগুলোতে আর আগ্রহ না থাকাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা। এটাকে বলা হয় অ্যানহেডোনিয়া, যেখানে আনন্দময় কাজগুলোও আর ভালো লাগে না। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, পরিবারের সাথে সময় কাটানো বা আগে যেসব ছোট আনন্দে মন ভালো হতো—এসবের প্রতি আগ্রহ কমে গেলে সেটা স্ট্রেস বা ডিপ্রেশন-এর ইঙ্গিত হতে পারে।
যদি দেখেন কিছুতেই আগের মতো ভালো লাগছে না, তাহলে নিজেকে একটু সময় দিন এবং বুঝতে চেষ্টা করুন ভেতরে কী চলছে।
মাঝে মাঝে রাগ হওয়া বা মুড খারাপ হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু যদি এটা বারবার হতে থাকে, তখন সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। হঠাৎ কাউকে কথা বলতে গিয়ে রাগিয়ে ফেলা, তুচ্ছ কারণে মন খারাপ হয়ে যাওয়া, বা কোনো কারণ ছাড়াই কান্না পেতে থাকা—এসবই মানসিক চাপ বা উদ্বেগের লক্ষণ হতে পারে।
এমন সময়ে একটু থেমে নিজের অনুভূতি নিয়ে ভাবুন। কারওে সাথে কথা বলা বা পেশাদার সাহায্য নেওয়া অনেক সময় ভেতরের চলমান সমস্যাগুলো স্পষ্ট করতে সাহায্য করে। আপনার অনুভূতিগুলোকে উপেক্ষা করবেন না—তাদের স্বীকার করুন।
বারবার মনোযোগ হারানো বা মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা খুব বিরক্তিকর হতে পারে। কাজ করতে বসে মন অন্যদিকে চলে যাওয়া, কোনো লেখা পড়ে কী পড়লেন মনে না থাকা, বা কথোপকথনের মাঝেই চিন্তা অন্যদিকে চলে যাওয়া, এসবই মানসিক চাপে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।
যদি মাথা ঝাপসা মনে হয় বা সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়, সেটা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সতর্কতা হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো টের পেলে নিজের মানসিক অবস্থার দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার।
মানসিক সমস্যার প্রভাব অনেক সময় শরীরেও দেখা যায়। অস্বাভাবিক ক্লান্তি, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, পেশিতে টান লাগা—এসবই স্ট্রেস বা উদ্বেগের কারণে হতে পারে। খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন—হঠাৎ খুব বেশি খাওয়া বা মোটেই খেতে ইচ্ছা না করা, এগুলোও মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
মন আর শরীর একে অপরের সাথে গভীরভাবে জড়িত। মনের সমস্যাগুলো শরীরে রূপ নিয়ে প্রকাশ পাওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। এসব লক্ষণ টের পেলে নিজের শরীরের কথা শুনুন এবং মানসিক সুস্থতার যত্ন নিন।
আপনার মানসিক স্বাস্থ্য আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কিছু ঠিক না লাগলে বা নিজের ভেতর পরিবর্তন অনুভব করলে তা গুরুত্বসহকারে দেখুন। এসব রেড ফ্ল্যাগ শুরুতেই চিনে ফেলতে পারলে নিজের মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
যদি এসব লক্ষণের কোনোটি আপনার সাথে মিলে যায়, তাহলে একটু বিরতি নিন, কারও সাথে কথা বলুন, অথবা প্রয়োজনে সাহায্য নিন।
সূত্র : Relationship Rules
মন্তব্য করুন