মাসুদ রানা
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৩, ০২:২২ এএম
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সাজা হলে জুবাইদারও নির্বাচনের দরজা বন্ধ

দুদকের মামলায় রায় কাল
ডা. জুবাইদা রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ডা. জুবাইদা রহমান। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার রায় ঘোষণা হবে আগামীকাল বুধবার। এর আগে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ কয়েক মামলায় তারেক রহমানের সাজা হলেও জুবাইদার বিরুদ্ধে এই প্রথম কোনো মামলায় রায় হতে যাচ্ছে। সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। দণ্ডিত আসামি হিসেবে বিদেশে পলাতক তারেক রহমানও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। দুদকের এ মামলার রায়ে ডা. জুবাইদার দুই বছরের বেশি সাজা হলে আইন অনুযায়ী তিনিও আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান কালবেলাকে বলেন, কেউ যদি নৈতিক স্খলনের দায়ে দুই বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হন তাহলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে তারেক ও জুবাইদা দণ্ডিত হলে বিচারিক আদালতে তাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে। পরবর্তী সময়ে কারাগারে গিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে। আপিলে দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হলে তবেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা দুদকের ওই মামলাকে সাজানো উল্লেখ করে কালবেলাকে বলেন, এই আন্দোলনের সময় জুবাইদা রহমান দেশে ফিরলে আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পাবে ও নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হবে। এই ভয়ে ও ভবিষ্যতে যদি সঠিক ফর্মুলায় নির্বাচন হয়, তাতে যেন জুবাইদা রহমান অংশ নিতে না পারেন সেজন্য সাজানো মামলায় রায়ের পাঁয়তারা চলছে।

ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মা ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। জুবাইদার আবেদনে ওই বছরই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট জুবাইদার আবেদন খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে ওই মামলায় আট সপ্তাহের মধ্যে জুবাইদাকে বিচারিক আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন জুবাইদা। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর গত ১৩ এপ্রিল পলাতক এ দম্পতির বিচার শুরু হয়।

গত ২৪ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম শেষ সাক্ষী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দেন। মামলাটিতে ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। ২৭ জুলাই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো গ্রেপ্তার হন। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনে পাড়ি জমান। সেই থেকে তিনি পরিবার নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন।

এ মামলায় তারেক-জুবাইদার সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এখানে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই। প্রত্যেক নাগরিক আইনের কাছে সমান। তারেক রহমান এ দেশের নাগরিক হিসেবে আইনের আওতায় এসেছেন। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলার সব অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর ও ২৭(১) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তাদের দুজনের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।

যেসব মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমান:

তারেকের বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারের মামলায় ২০১৩ সালে প্রথম রায়টি হয় এবং তাতে তিনি খালাস পেয়েছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে হাইকোর্ট ৭ বছরের দণ্ড দেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় মায়ের সঙ্গে তারেকেরও কারাদণ্ডের রায় হয়। খালেদা জিয়ার হয় পাঁচ বছর কারাদণ্ড, তারেকের হয় ১০ বছর সাজা। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার প্রতিটিতে কয়েকটি ধারায় তাকে তিনবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। সেইসঙ্গে বিস্ফোরক আইনের আরেকটি ধারায় তার ২০ বছর কারাদণ্ডাদেশ হয়। তবে সব সাজা একসঙ্গে কার্যকরের উল্লেখ থাকায় তারেককে যাবজ্জীবন সাজা খাটার বিষয়টি রায়ে উল্লেখ করা হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগে নড়াইলে দায়ের হওয়া মানহানি মামলায় তারেক রহমানকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ থেকে নতুন দামে বিক্রি হবে সোনা

গুরুতর আহত আদাহ শর্মা

ইরানে মোসাদের ৫০ এজেন্ট আটক

বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে যেসব খাবার

ট্রাম্প-নেতানিয়াহুকে কিনতে পারেন বহুবার, খামেনির সম্পদ কত?

কোরআনে বর্ণিত যে নারীকে অনুসরণ করেন ইহুদিরা

খালি পেটে চিরতার পানি, উপকার নাকি ক্ষতি 

ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে হত্যার ফতোয়া জারি করল ইরান

গাজা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ইসরায়েল

টিভিতে আজকের খেলা

১০

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে অশালীন মন্তব্য, ছাত্রলীগ কর্মীর চুল কর্তন

১১

০২ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১২

ঢাকায় বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যা

১৩

বুধবার ঢাকার যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

১৪

০২ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৫

টিকাটুলিতে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

১৬

বিয়ের প্রলোভনে ‘ধর্ষণ’, পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার

১৭

পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করতে যান ছাত্রদল নেতা, অতঃপর...

১৮

ছাত্রীদের হলে পুরুষ স্টাফ দিয়ে তল্লাশি

১৯

দাম কমলো ইন্টারনেটের

২০
X