বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩, ০১:৫৪ এএম
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৩, ১১:১৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সাজা কমলেও সুযোগ থাকবে অপব্যবহারের

সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়েও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশি-বিদেশি চাপের মুখে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামে নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যে হয়রানির সুযোগ ছিল, তার পুরোটাই থেকে যাচ্ছে নতুন আইনেও। নতুন আইনের খসড়ায় কিছু ধারা জামিনযোগ্য করা হয়েছে। কিছু ধারায় সাজার পরিমাণ কমানো হয়েছে। বাকি সব পুরোনো আইন থেকে নেওয়া হয়েছে। অপরাধের সংজ্ঞা ও বিষয়বস্তুতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও রয়েছে আগের বিধান। সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এই খসড়া নিয়ে এরই মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ফের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে আইনটির অংশীজনের মধ্যে।

গত সোমবার সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এখন খসড়াটি ভেটিং (আইনি যাচাই) সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবার মন্ত্রিসভায় উঠবে। সরকারের লক্ষ্য, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আইনটি পাস করা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির ওয়েবসাইটে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া প্রকাশ করা হয়। এ খসড়ার সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দুই আইনের মধ্যে পরিবর্তন বলতে প্রথমত শাস্তি কমানো ও জামিনযোগ্য ধারা বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের অপরাধের (প্রমাণিত হলে) ক্ষেত্রে কারাদণ্ডের পরিবর্তে শুধু জরিমানার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি ধারা (৩৩ ও ৫৭) প্রস্তাবিত আইনে একেবারে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই দুই ধারায় প্রথমটিতে ‘বেআইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ধারণ, স্থানান্তর ইত্যাদির দণ্ড’ সম্পর্কে বলা আছে। আর দ্বিতীয়টিতে বলা আছে, ‘সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম’ সম্পর্কিত অপরাধের কথা। নতুন আইনের খসড়ায় মোট ধারা ৬০টি, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রয়েছে ৬২টি। প্রস্তাবিত আইনে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমবারের জন্য যে সাজা, বারবার করলেও একই সাজা হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে সাজা বেশি রাখার বিধান রয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, শুধু নাম পরিবর্তন করে নতুন মোড়কে পুরোনো আইন আবার চালানো হবে কি না, তা নিয়ে সুজন উদ্বিগ্ন। নতুন আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রায় সব বিধানই থাকছে। কিছু পরিবর্তনের কথা জানা যাচ্ছে। এমনকি বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের বিধানও থাকছে। এতে নতুন আইনটি আগের আইনের মতো নাগরিকদের জন্য নিবর্তনমূলকই রয়ে যাবে বলে মনে করছে সুজন। সুজনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অনেকটা হঠাৎ করেই এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের ক্ষেত্রেও একই কাজ করা হয়। প্রস্তাবিত আইনে সাজা কমানোর প্রসঙ্গে সুজন বলেছে, সাজা দেওয়া হয় বিচারিক প্রক্রিয়ায় কেউ দোষী প্রমাণিত হলে; কিন্তু দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় হয়রানির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করে, নাগরিকদের মতামত গ্রহণ করে নতুন আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে সুজন।

এর আগে গত বুধবার দৈনিক পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন ‘সম্পাদক পরিষদ’ নতুন খসড়া আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের চরিত্রগত পার্থক্য না থাকলে, শুধু নাম বদল করে নতুন আইন করা হবে অর্থহীন।’ সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার সময় সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজনের উদ্বেগ আমলে নেয়নি। সেই আইন সংশোধন, বাতিল বা নতুন আইন করার ক্ষেত্রে অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও তাদের মতামত নেওয়া হবে, সেটাই প্রত্যাশিত ছিল।

২০১৮ সালে সরকার যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের উদ্যোগ নেয়, তখন আইনটির বিভিন্ন ধারা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা ও প্রতিবাদ হয়েছিল। সম্পাদক পরিষদ ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তাদের উদ্বেগের বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে বিবৃতিও দেয়। তাতে আইনটির ৯টি ধারার (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) মৌলিক কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করে। এর পর থেকে আইনটির অপব্যবহার চলছেই। নানা সময়ে সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, জাতিসংঘসহ দাতা সংস্থাগুলো আইনটির অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি ধারা (২১ ও ২৮) বাতিলের দাবি জানায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের দপ্তর। তাদের মতে, এ ধারা দুটি অস্বচ্ছ এবং এগুলোর রাজনৈতিক ব্যবহারের সুযোগ সবচেয়ে বেশি। আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ প্রদান করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।’ প্রস্তাবিত আইনে শুধু সাজা কমিয়ে সাত বছর করা হয়েছে। তবে অর্থদণ্ড আগের মতোই ১ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করলে যাবজ্জীবন বা ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান প্রস্তাবিত আইনে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উসকানি প্রদানের অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক ৫ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে সাজা হবে অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড। নতুন আইনেও এটি রয়েছে, বিষয়বস্তুর অস্পষ্টতা দূর করা হয়নি। এ ছাড়া প্রস্তাবিত আইনে এই অপরাধের সাজা সর্বোচ্চ দুই বছর বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড করার বিধান রাখা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারায় আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ ইত্যাদি অপরাধের বিষয়ে বলা আছে। কোনো ব্যক্তি এই অপরাধ করলে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারায় সবচেয়ে বেশি ১২৪টি মামলা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে এই ধারার বিষয়বস্তু একই রেখে সাজা কমিয়ে দুই বছর করা হয়েছে। তবে জরিমানার পরিমাণ একই রাখা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করলে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। সিজিএস পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ২৯ ধারায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে ১১৮টি। প্রস্তাবিত নতুন আইনে এই ধারার অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের বিধান বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার শাস্তি রাখা হয়েছে। এখন এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই জরিমানা আছে ৫ লাখ টাকা।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারায় বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো বা ঘটার উপক্রম-সংক্রান্ত অপরাধের কথা রয়েছে। এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে এই সাজা কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। আর অর্থদণ্ড বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে কারাদণ্ড সর্বোচ্চ সাত বছর বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ৮-এর বিষয়বস্তু প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনেও হুবহু রাখা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে মহাপরিচালকের (ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি) নিজ অধিক্ষেত্রভুক্ত কোনো বিষয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করলে তিনি (মহাপরিচালক) ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ক্ষেত্রমতো ব্লক (বন্ধ বা বাতিল) করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) অনুরোধ করতে পারবেন।

আর যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে প্রতীয়মান হয় যে, ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা তার কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার জন্য মহাপরিচালকের মাধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে। এসব বিষয়ে অনুরোধ পেলে বিটিআরসি সেসব বিষয় সরকারকে জানিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ বা ক্ষেত্রমতো ব্লক করবে।

৪৩ ধারার বিষয়বস্তু পুরোটাই বহাল: সম্পাদক পরিষদ ও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল। প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে এই ধারার (খসড়ায় ৪২ ধারা) বিষয়বস্তু ও সাজার বিষয়টি হুবহু রাখা হয়েছে। পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত এই ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন যে, কোনো স্থানে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা হচ্ছে বা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বা সাক্ষ্য-প্রমাণাদি হারানো, নষ্ট হওয়া, মুছে ফেলা, পরিবর্তন বা অন্য কোনো উপায়ে দুষ্প্রাপ্য হওয়ার বা করার সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে ওই কর্মকর্তা বিশ্বাসের কারণ লিখে ওই স্থানে প্রবেশ করে তল্লাশি এবং প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়া ওই স্থানে তল্লাশিকালে পাওয়া অপরাধ সংঘটনে ব্যবহার্য কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, তথ্য-উপাত্ত বা অন্যান্য সরঞ্জামাদি এবং অপরাধ প্রমাণে সহায়ক কোনো দলিল জব্দ করতে পারবেন। এমনকি ওই স্থানে উপস্থিত যে কোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি, সন্দেহ হলে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। এ বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধারাও যেহেতু বহাল থাকছে, তাই নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না।

নতুন আটটি ধারা জামিনযোগ্য হলো: বিদ্যমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অজামিনযোগ্য ধারা ছিল ১৪টি। এই ধারাগুলো হলো ১৭, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ এবং ৩৪ ধারা। এখান থেকে ৮টি ধারা প্রস্তাবিত আইনে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এগুলো হলো ২২, ২৩, ২৪, ২৬, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৩৪ ধারা। প্রস্তাবিত আইনে নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে জামিনযোগ্য ধারাগুলো হলো: ১৮(১)(খ), ২০, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৬। অন্যদিকে প্রস্তাবিত আইনে অজামিনযোগ্য ধারা ৬টি। এগুলো হলো: ১৭, ১৯, ২১, ২৭, ৩০ ও ৩৩। জামিনযোগ্য ও অজামিনযোগ্য ধারার বিষয়টি প্রস্তাবিত আইনের ৫২ ধারায় রয়েছে।

জানতে চাওয়া হলে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া কালবেলাকে বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এতটাই নিপীড়ন ও নিবর্তন মূলক আইন যে, এটা করাই হয়েছে মানুষকে হয়রানি করার জন্য। নতুন আইনে বিতর্কিত সবগুলো ধারাই থাকছে। এর আগে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বিলোপ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এখন নাম পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। ধারা বহাল রেখে নাম পরিবর্তন কেবল পাত্র পরিবর্তন করার মতো। এটা হলে যারা ভুক্তভোগী সাধারণ নাগরিক তারা কোনোভাবে উপকৃত হবে না।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জেসিআই ঢাকা প্রেস্টিজের ব্যতিক্রমধর্মী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত ও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন

ভারতীয় সিনেমায় জয়াকে নিয়ে আপত্তি কংগ্রেস নেত্রীর

রাজনৈতিক কারণে পাঠ্যবইয়ে জায়গা হয়নি শহীদ ওয়াসিমের : ছাত্রদল সেক্রেটারি

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ডটি নিরাপদ আছে তো?

ইতিহাসে রেকর্ড দামের পর দরপতন বিটকয়েনের

এজাহার থেকে ৫ জনের নাম বাদ দেন সোহাগের বোন : ডিএমপি কমিশনার

এনবিআরের আন্দোলনে অর্থনৈতিক ক্ষতি নিরূপণে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলা

গোপালগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা, সড়ক অবরোধ

বিভিন্ন গ্রেডে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে বিশাল নিয়োগ দিচ্ছে রুয়েট

১০

মঞ্চে শহীদ পরিবার, দর্শকসারিতে দুই উপদেষ্টা

১১

গোপালগঞ্জে এনসিপির গাড়িবহর

১২

বাম চোখ লাফালে কি বিপদ আসে? কী বলছে ইসলাম

১৩

গোপালগঞ্জে নাশকতার ঘটনায় ৭ জন আটক

১৪

‘পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তারের ব্যবসা করতেন সোহাগ’

১৫

ভারতের পুরোনো ভিডিও ছড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শনাক্ত : বাংলাফ্যাক্ট

১৬

এইচএসসি পাসেই নিয়োগ দিচ্ছে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়

১৭

বিশ্বকাপ দেখার স্বপ্ন? টিকিট কবে থেকে মিলবে জানাল ফিফা

১৮

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন শাকিবের প্রযোজক 

১৯

কুষ্টিয়ায় পৃথক অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ আটক ২

২০
X