দুই বাংলার নন্দিত অভিনেত্রী জয়া আহসান এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ‘ডিয়ার মা’ মুক্তির অপেক্ষায় থাকলেও, তার আগেই কলকাতার মাটিতে জয়ার অভিনয় ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্কের ঝড়। সিনেমাটি মুক্তির আগেই কলকাতায় জয়ার অভিনয় করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুললেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদিকা জুঁই বিশ্বাস।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) জুঁই তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তাতে জয়ার কাজ করা নিয়ে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। জুঁই লেখেন, ‘আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা কী জেগে ঘুমিয়ে আছি? আমাদের শিল্পী, কলাকুশলী, ইভেন্ট অর্গানাইজাররা বাংলাদেশে কাজ করতে পারছেন না, আটক করে রাখা হচ্ছে, অথচ জয়া আহসানকে ভারতে রেড কার্পেট দিয়ে অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের কোনো শিল্পীর কি প্রতিভা নেই, জয়া যে চরিত্রটি করেছেন সেখানে অভিনয় করার মতো? কেন ভারতীয় জাদুঘরে তার মিউজিক অ্যালবাম রিলিজ হয়?’
এরপর বুধবার (১৬ জুলাই) সকালে জুঁই তার ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। এতে জুঁই বলেন, এটি সত্যি যে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা বাংলাদেশে কাজ করতে গেলে প্রশাসনিক জটিলতা, ভিসা জট বা এমনকি ডিটেনশন এর মতো ঘটনাও ঘটছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও দুশ্চিন্তার বিষয়। যদি দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়, তাহলে সেটা দুই-পক্ষের হওয়া উচিত। এমনটা না যে এক তরফা উদারতা দেখাতে হবে, এমনকি এক তরফা বন্ধুত্ব মেনে নিতে হবে।
জয়াকে টেনে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ যদি ভারতীয় শিল্পীদের জন্য সুযোগ সীমিত করে রাখে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, ভারত কেন বাংলাদেশি শিল্পীদের জন্য দরজা খোলা রাখছে? জয়া আহসান নিঃসন্দেহে একজন প্রতিভাবান অভিনেত্রী, কিন্তু প্রশ্নটা প্রতিভার নয়—প্রশ্নটা ন্যায়বিচার ও ভারসাম্যের। যখন ভারতীয় শিল্পীরা সীমাবদ্ধতায় ভোগেন, অথচ বাংলাদেশি শিল্পীরা এখানে বড় সুযোগ পান, তখন তা সবার চোখে বৈষম্য বলে মনে হয়।‘
এদিকে নির্মাতা ও প্রযোজকদের প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জুঁই বিশ্বাস বলেন, এখানে পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কি সেই চরিত্রগুলো করতে অক্ষম? অবশ্যই না। তাহলে বারবার বিদেশি শিল্পীদের এমন ‘বাড়তি’ গুরুত্ব দেওয়ার যুক্তি কী? প্রযোজক-পরিচালকরা দেশ বিরোধী কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত নয় কি?
যে কোনো শিল্পচর্চা অবশ্যই মুক্ত হওয়া উচিত। কিন্তু তার মধ্যে দেশীয় শিল্পীদের সুযোগ দেওয়াটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যখন তাদের কাজের সুযোগ বিদেশি শিল্পীদের দিয়ে দেওয়া হয়, তখন সেটি দায়বদ্ধতার অভাব বলেই মনে হয়।
তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতীয় শিল্পীদের কাজ করা নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। এমনকী গত বছর শাকিব খানের ‘বরবাদ’ সিনেমায় কলকাতার শ্যাম ভট্রাচার্য ‘জিল্লু’ চরিত্রে অভিনয় করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন। কলকাতার নায়িকা ইধিকা পালও কাজ করেছেন বরবাদে। এছাড়া কলকাতার কলাকুশলীরাও কাজ করছেন ঢাকাইয়া সিনেমায়।
শাকিব খানের ‘দরদ’ সিনেমাতেও নায়িকা হিসেবে দেখা গেছে মুম্বাইয়ের সোনাল চৌহানকে। যা গত বছর মুক্তি পায়। তাই জুঁই বিশ্বাসের এ ধরনের দাবিকে ভিত্তিহীন বলেই উড়িয়ে দিচ্ছেন দুই বাংলার অনেক দর্শক ও নেটিজেনরা।
মন্তব্য করুন