যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে একটি হত্যা মামলায় ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন সেদেশের সর্বোচ্চ আদালত। বুধবার (১৬ জুলাই) তার সাজা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে ভারতের অনুরোধে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়সীমা এক দিন পিছিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে আলোচনার জোর চেষ্টা চলেছে এবং তারই প্রেক্ষিতে মাহদি পরিবার অন্তত একদিনের জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়সীমা পেছানোর অর্থ এই নয় যে নিমিশা প্রিয়াকে ক্ষমা করা হয়েছে, কিংবা তাকে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে। তিনি এখনো হুতি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের রাজধানী সানার একটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন—যেখানে ভারতের সরাসরি কূটনৈতিক প্রভাবও খুবই সীমিত।
নিমিশা প্রিয়া ২০০৮ সালে নার্সের চাকরি নিয়ে ইয়েমেনে যান। পরে স্বামী ও কন্যাসহ সেখানে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু ২০১৪ সালে স্বামী-কন্যা দেশে ফিরে এলে তিনি সেখানে থেকে যান নিজের ক্লিনিক খোলার আশায়। ক্লিনিক খোলার আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে স্থানীয় নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়েন তিনি। কিন্তু শুরু থেকেই তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হতে থাকে।
নিমিশার অভিযোগ, মাহদি তাকে জোর করে নিজের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন, তার টাকা ও পাসপোর্ট আত্মসাৎ করেন এবং প্রশাসনিক সহায়তা পাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেন। পুলিশের দ্বারস্থ হলেও কোনো ফল মেলেনি।
২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। অভিযোগ অনুযায়ী, ওইদিন মাহদিকে ঘুমের ইনজেকশন দেন নিমিশা, যার লক্ষ্য ছিল তার পাসপোর্ট উদ্ধার। কিন্তু ওভারডোজে মাহদি মারা যান। পরে এক সহকর্মীর সহায়তায় তার মরদেহ টুকরো করে পানির ট্যাংকে ফেলে দেন। পালানোর চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার হন নিমিশা।
এরপর থেকেই ইয়েমেনের কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে ইয়েমেনের আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়, যা ২০২৩ সালে ইয়েমেনের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এবং প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সেই সাজা বহাল রাখা হয়।
ভারত এই মামলাকে ‘অত্যন্ত জটিল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি সুপ্রিম কোর্টকে জানান, ভারত সরকারের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, তা করা হয়েছে। এখন একমাত্র পথ হলো, মাহদি পরিবারের সম্মতিতে ‘রক্তমূল্য’ (একটি ইসলামি আইনি ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা) পরিশোধ করে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
ভারত সরকার ও প্রিয়ার পরিবার সাম্প্রতিক সময়ে মাহদি পরিবারের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতার চেষ্টায় আছে এবং আরও সময় চাচ্ছে আলোচনা চালিয়ে যেতে। সূত্র মতে, ইয়েমেনের কারা কর্তৃপক্ষ ও প্রসিকিউটরদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করায় মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করা সম্ভব হয়েছে।
এই মুহূর্তে নিমিশা প্রিয়ার ভাগ্য নির্ভর করছে মাহদি পরিবারের সিদ্ধান্তের ওপর। তারা যদি ‘রক্তমূল্য’ গ্রহণ করে, তাহলে মৃত্যুদণ্ড এড়ানো সম্ভব হতে পারে। তবে ইয়েমেনে আইনি ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া জটিল এবং হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সীমিত বলেই চূড়ান্ত ফল অনিশ্চিত।
ভারতের জনগণ, মানবাধিকার কর্মী ও কেরালার স্থানীয় প্রশাসন এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছে। এখন দেখার বিষয়, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায় কি না—নাকি কার্যকর করা হবে মৃত্যুদণ্ড।
মন্তব্য করুন