রাশেদ রাব্বি ও মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩২ এএম
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:০১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংকটে মেডিকেল শিক্ষা বঞ্চিত চিকিৎসকরা

কলেজগুলোতে অর্ধেক শিক্ষক পদ শূন্য
সংকটে মেডিকেল শিক্ষা বঞ্চিত চিকিৎসকরা
ছবি: কালবেলা গ্রাফিক্স

দেশে চিকিৎসা শিক্ষা সংকটে পড়েছে। বিভিন্ন সময়ে দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার্থী আসন সংখ্য। এমনকি বেড়েছে সারা দেশের হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা। শুধু বাড়েনি শিক্ষক ও চিকিৎসকের সংখ্যা। সরকারি পর্যায়ে ছয় হাজারের বেশি (৬১৮৩ জন) চিকিৎসক পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে হতাশায় ভুগছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদোন্নতির মাধ্যমে এই সংকট নিরসন সম্ভব। তবে নানা জটিলতায় সেটিও দ্রুত করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন দায়িত্বশীলরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এমআইএস তথ্যে দেখা যায়, দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজে অধ্যাপকের পদ রয়েছে ৮৩৩টি। এর মধ্যে ৫২৩টি অর্থাৎ ৬২ দশমিক ৭৮ শতাংশ পদই ফাঁকা। একইভাবে সহযোগী অধ্যাপকের ১ হাজার ৫২৬টি পদের মধ্যে ৫৬০টি, সহকারী অধ্যাপকের ২ হাজার ২৮৪টি পদের মধ্যে ১ হাজার ৭৮টি, কিউরেটরের ৬২টি পদের মধ্যে ১৩টি এবং প্রভাষকের ১ হাজার ৪২০টি পদের মধ্যে ৩০৮টি পদ ফাঁকা। সব মিলে ৬ হাজার ১২৫টি পদের মধ্যে ২ হাজার ৪৮২টি অর্থাৎ ৪০ দশমিক ৫২ শতাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

মেডিকেল কলেজগুলোয় এমবিবিএস কোর্সে শিক্ষার্থীদের ৮টি বেসিক বা মৌলিক বিষয় পড়ানো হয়। এগুলো হলো অ্যানাটমি, বায়োকেমিস্ট্রি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফরেনসিক মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি ও ফিজিওলজি। সরকারি মেডিকেল কলেজে বেসিক বিষয়ে পাঠদানের জন্য ২ হাজার ৫টি পদের মধ্যে ৫০৯টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপকের জন্য অনুমোদিত ২১৩টির মধ্যে ১৪৮টি, সহযোগী অধ্যাপকের জন্য নির্ধারিত ২৫৫টির পদের মধ্যে ৮৮টি, সহকারী অধ্যাপকের ৩৪৪টি পদের মধ্যে ১০৮টি, কিউরেটরের ৫২টি পদের মধ্যে ৮টি পদ শূন্য রয়েছে।

বিগত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে ২০২৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট, হোমিওপ্যাথিক ও ইউনানী মেডিকেল কলেজ, আইএইচটি/ম্যাটস প্রতিষ্ঠা আসন বৃদ্ধি, কোর্স অনুমোদন ইত্যাদি সংক্রান্ত কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য এমবিবিএস কোর্সের ১ হাজার ৩০টি আসন বাড়ানো হয়। যেখানে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ছিল ৪ হাজার ৩৫০টি। ১ হাজার ৩০টি আসন বাড়ায় এসব মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা দাড়ায় ৫ হাজার ৩৮০টিতে।

গত ২৫ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীকে (স্বাস্থ্য) পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি দেয় বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম। সেখানে তারা উল্লেখ করেন, ‘আমরা প্রায় ছয় হাজার চিকিৎসক সরকার কর্তৃক গৃহীত চাকরিবিধি অনুযায়ী চাকরি স্থায়ীকরণ, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেও দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত অবস্থায় চাকরিরত আছি। অধিকাংশ বিষয়েই পদ শূন্য নেই অজুহাতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব নয় বলে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সব বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নির্বাহী আদেশে পদের অতিরিক্ত পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি।

বিসিএস স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম সভাপতি ডা. মীর্জা মো. আসাদুজ্জামান রতন বলেন, ছয় হাজারের বেশি চিকিৎসক পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন। পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেও দুই থেকে ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে, যা অমানবিক। তিনি বলেন, এতে দেশের চিকিৎসা শিক্ষা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে রোগীদের সেবাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, অবিলম্বে চিকিৎসকদের পদোন্নতি প্রদান করা না হলে দেশের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পদোন্নতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু জটিলতা রয়েছে—যেমন ক্যাডার-ননক্যাডার জটিলতা; অর্থাৎ ননক্যাডার থেকে যারা ক্যাডারভুক্ত হয়েছেন তাদের ও ক্যাডারদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ কীভাবে হবে? ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী চিকিৎসকরা অধ্যাপক হতে পারবেন কি না, সেই জটিলতা। যারা বৈষম্যের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতা। এ ছাড়া মূল বিষয়ের বাইরে যাদের সাব-স্পেশালিটি রয়েছে তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন। এ ধরনের জটিলতা নিরসনে একটি কমিটি করা হয়েছে। আশা করছি, শিগগির কমিটি তাদের সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করবে। তারপর পদোন্নতির কার্যক্রম শুরু হবে।

এদিকে অধিদপ্তরের আরেকটি সূত্র জানায়, গত বছর ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন বাংলাদেশের এমবিবিএস পরীক্ষার সনদের অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করেছে। কারণ বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে।

তবে অধ্যাপক নাজমুল বলছেন, এটা বাতিল হয়নি বা বাতিল করার বিষয় নয়। চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে তাদের কিছু নির্দেশনা ছিল। সেটা বাস্তবায়নে বিগত সরকার কাজ শুরু করে। সেই কাজ এখনো চলমান রয়েছে। আশা করছি আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে এটা নিশ্চিত হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইন্দোনেশিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মারমুখী অবস্থান, আন্দোলনে নতুন মোড়

প্রিন্স মামুনের সেলুন কেনা নিয়ে মুখ খুললেন অপু বিশ্বাস

দুপুরের মধ্যে ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস 

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

আফগানিস্তানে কেন বারবার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানছে

সাদাপাথরে যে সৌন্দর্য ফিরবে না আর

আগস্টের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স আসেনি ৯ ব্যাংকে

বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে ঢাকা

মাথায় টাক পড়ছে? ৫ অসুখের লক্ষণ হতে পারে চুল পড়া

৪৭তম ট্রফি জেতা হলো না মেসির, ফাইনালে মায়ামির লজ্জার হার

১০

১৩০ বছরের ‘জিয়া বাড়ি’ আজও অবহেলিত

১১

ফের আলোচনায় ভারতের সুপার স্পাই অজিত দোভাল

১২

বিবিসি নাকি ভাই ভাই চ্যানেল, নারী সংবাদিক ভাইরাল

১৩

সুস্থ থাকতে রাতে ভাত খাবেন, না রুটি? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

১৪

তাহসানের সংগীতের রজতজয়ন্তী পালন হবে অস্ট্রেলিয়ায় 

১৫

পাকিস্তানের বিপক্ষে শি জিনপিংয়ের সহায়তা চাইলেন মোদি

১৬

১ সেপ্টেম্বর: কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৭

বিদ্যুৎ কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ, আবেদন করুন আজই

১৮

ডিএমপির দুই অতিরিক্ত কমিশনারের দপ্তর বদল

১৯

মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে যে জেলায়

২০
X