আমজাদ হোসেন হৃদয়
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে রাজনীতিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়বে

সাক্ষাৎকারে সামান্তা শারমিন
নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে রাজনীতিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়বে

নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন সামান্তা শারমিন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে কালবেলার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি, যেখানে জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা, জুলাই পরবর্তী পরিস্থিতিতে নারীর অংশগ্রহণ, নারী নেতৃত্বসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে।

কালবেলা: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

সামান্তা শারমিন: জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের যে ভূমিকা, সেটাকে দেখা হয় প্রথমত, অভ্যুত্থানে যখন একদম সম্মুখ যুদ্ধের পরিস্থিতি, তখন নারীদের যে শেল্টার দেওয়া, সেইসঙ্গে কেয়ার প্রোভাইডারের যে ভূমিকা, সেই জায়গা থেকে প্রধানত দেখা হয়। ১৪ জুলাই রাতে যখন ‘এই রাজাকারের বাচ্চারা’ বলার প্রতিবাদে হলের মেয়েরা নেমে এসেছিল, সেটাকে আমি নারীদের পক্ষ থেকে দেখি প্রথম বিজয় এবং অভ্যুত্থানের সূচনা হয় ওই মোমেন্টে। কারণ আওয়ামী লীগের যে ন্যারেটিভ দিয়ে এত বছরে সরকার কাঠামো টিকিয়ে রাখা হয়েছিল, সেই ন্যারেটিভ ভেঙে ফেলা হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে আমরা মূলত অভ্যুত্থানের দিকে যাত্রা শুরু করেছি। যখন দেখি একেবারে সম্মুখ যুদ্ধ, সরাসরি শুরু হয়েছে—পুলিশের আক্রমণের মুখে, গুলির মুখে ছাত্ররা দাঁড়িয়েছে, তখন সম্মুখভাগে আমরা নারীদের দেখেছি। নারীদের সম্মুখভাগে দাঁড়ানোর যে জায়গাটা, সেটাকে আমি দুইভাবে দেখতে চাই। প্রথমত, তার পেছনে যে ভাই আছে, তাকে নিরাপদ রাখার যে ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা, সেটি কাজ করতে পারে। দ্বিতীয়ত, পলিটিক্যালি নিজেকে এক্সপ্রেস করার ওয়ে হিসেবে নারীরা সম্ভবত অভ্যুত্থানে গিয়েছিল, যেখানে যোদ্ধা হিসেবে নিজেদের এক্সপ্রেস করেছে, আবির্ভূত হয়েছে।

কালবেলা: অভ্যুত্থানের পর নারীদের ভূমিকা কেমন ছিল?

সামান্তা শারমিন: অভ্যুত্থানের পর নারীরা একরকম ত্রাতার ভূমিকায় ছিল বলা যায়। কারণ অভ্যুত্থানের পর শহীদদের তালিকা করা, আহতদের তালিকা করা, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা—এই পরিস্থিতি আমরা যখন পার করেছি, তখন নানা ফ্রন্টে নারীদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখেছি। তাদের যে ইন্টার্নাল কেয়ারিং এবং মেকানিজম—এটা আসলে বাংলাদেশের অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জাতিগত যে ট্রমা ছিল, সেখান থেকে উত্তরণে অনেক কাজে লেগেছে।

কালবেলা: অভ্যুত্থান-পরবর্তী পর্যায়ে নারীদের যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে কি না?

সামান্তা শারমিন: বলা হচ্ছে, নারীদের অনেক অবদান ছিল, নারীরা না হলে হতো না। কিন্তু কেন হতো না? প্রতিটি জিনিস যতই দুর্ভেদ্য হোক না কেন—এটার মেকানিজম আছে। এই মেকানিজমটাকে কেউ এক্সপ্লেইন করছে না। এই মুহূর্তে এসে আমরা মনে করলাম অভ্যুত্থানের এই জায়গাগুলো একনলেজ করা উচিত। এগুলোকে বোঝাপড়ার মধ্যে নিয়ে আসা উচিত। ধাপে ধাপে এই যে মেয়েরা নিজেদের এক্সপ্রেস করেছে, উচিত ছিল এগুলো নিয়ে বারবার কথা বলা। এই ন্যারেটিভগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।

কালবেলা: আন্দোলনে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা গেছে, রাজনীতিতে কেন তা দেখা যায় না?

সামান্তা শারমিন: অভ্যুত্থান কোনো সংগঠনের আন্ডারে হয়নি। হয়েছে একটা ব্যানারে, একটা স্বতঃস্ফূর্ত জায়গা থেকে। বলতে হবে যে, নারীরা এখানে নিরাপদ বোধ করেছে। কারণ তাদের এই অভিজ্ঞতা হয়তো আছে যে, নারীদের সাংগঠনিকভাবে শুধু ফেস হিসেবে ব্যবহার করা হয় বা একটা সংগঠনে নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়, যেখানে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকে না। কিন্তু নারী যখন অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করছে, সে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ মেয়েরা পরিবারের সমর্থন পেয়েছে। এই যে পরিবর্তন, এটা ঘটেছে কারণ নিজের বাসার চেয়েও এই রাস্তা, এই যুদ্ধ—এটাতে তারা নিরাপদ বোধ করেছে। তার যে পলিটিক্যাল এজেন্সি, সেটা প্রকাশ করতে পেরেছে কোনো ধরনের ব্যবহার হওয়া ছাড়াই। এ কারণেই এখানে স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল। এটা কোনো ব্যক্তির মধ্যে, কোনো সংগঠনের মধ্যে না থাকলে এই স্বতঃস্ফূর্ততা আসবে না।

কালবেলা: রাজনীতিতে নারীদের পিছিয়ে পড়ার কারণ কী?

সামান্তা শারমিন: একটা বড় কারণ হচ্ছে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যা মূলত গুটিকয়েকের রাজনীতি, যার জন্যই ফ্যাসিস্ট এলিমেন্ট থেকে যায় এবং ফ্যাসিস্ট তার মতো করে ফাংশন করতে পারে। গুটিকয়েকের রাজনীতি, গুটিকয়েকের সমাজ, গুটিকয়েকের পরিবার—আমরা এটার বিরুদ্ধাচরণ করি। সবার অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের প্রথম ও প্রাথমিক দায়িত্ব। প্রতিটি ক্ষমতার বদল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে হয়। এ কারণেই কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে চায় না। এই জায়গায় আমরা যদি পরিবারগুলোকে ভরসা দিতে পারি, তাহলে এখান থেকে আগানো যাবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে রাজনীতিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

কালবেলা: এনসিপির নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণ কেমন?

সামান্তা শারমিন: আমাদের নিজেদের ক্ষেত্রে আমরা এটাতে পিছিয়ে আছি। এটা আমাদের জন্য টপ মোস্ট প্রায়োরিটি আকারে আছে যে, আমরা নারীদের কীভাবে ইনক্লুড করব। একটা কথা আছে যে, শুধু নারী বলে একটা এক্সকিউজ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা মনে করি, এই ধারণা মোটা দাগে নারী বিদ্বেষ তৈরি করবে সমাজে, দীর্ঘমেয়াদে সমাজের জন্য ভালো নয়, এতে নারী বিদ্বেষ তৈরি হবে। আমরা চাই যারা যোগ্য এবং ওই মাত্রায় এঙ্গেজ হওয়ার সুযোগ আছে, তাদের ইনক্লুড করা। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব প্রায় ১৫ শতাংশ আছে, সেটাকে ত্রিশের ওপরে নিয়ে যাওয়া হবে দ্রুততম সময়ে। শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যায়ে ৩০ শতাংশ নারী আছে এনসিপিতে।

কালবেলা: নারী দিবস নিয়ে কী বলবেন?

সামান্তা শারমিন: নারীদের নারী দিবসের ঊর্ধ্বে গিয়ে ভাবতে হবে। আমরা একটা দিবস এলেই শুধু স্পেশাল নজর দিই। কিন্তু দিবসটা পার হয়ে গেলে পরেরদিনই আমরা সেটা নিয়ে আর কথা বলি না। আলোচনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হলো, তার কোনো রিভিউ পয়েন্ট থাকে না। আমরা চাই, শুধু দিবসকেন্দ্রিক নয়, বছরজুড়ে আলোচনা হোক এবং নারীদের উন্নয়নে কাজ হোক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অফিসে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে যুবলীগ নেতার হেনস্তা

জলবায়ু রক্ষায় প্লাস্টিকের বোতলের বিনিময়ে টাকা দেবে সরকার

চাকরি দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক, থাকছে না বয়সসীমা

আবু সাঈদ হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল

চট্টগ্রামে ৫টি গুইসাপ উদ্ধার

ট্রাম্পের বক্তব্য লক্ষ-কোটি মুসলিমের অনুভূতিতে আঘাত করেছে : ইরান

‘জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি’ চালু করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল গাজীপুরের কাঁঠাল

নেক সন্তান পাওয়ার জন্য যেসব আমল করবেন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসা যাবে, তবে...

১০

গৃহবধূর মরদেহ ফেলে পালাল শ্বশুরবাড়ির লোকজন

১১

বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে নিখোঁজ কলেজছাত্রী, সাড়ে তিন মাসেও মেলেনি সন্ধান

১২

ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইরানের ফতোয়া

১৩

টিভিতে আজকের খেলা

১৪

ইরাকে রহস্যজনকভাবে ৪০০ গাজেল নিখোঁজ

১৫

আমি এমপি হলে কাউকে ঢাকায় রিকশা চালাতে হবে না : মামুন

১৬

সিরিয়ায় আশুরার অনুষ্ঠান স্থগিত, ইরানে ছুটছে ইরাকিরা

১৭

৩০ জুন : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৮

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৯

সোমবার ঢাকার যেসব এলাকায় মার্কেট বন্ধ

২০
X