সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশেষ সাক্ষাৎকার ডা. শাহাদাত হোসেন

পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ চট্টগ্রাম গড়তে পাশে চাই সব নাগরিককে

পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ চট্টগ্রাম গড়তে পাশে চাই সব নাগরিককে

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নাগরিক দুর্ভোগের অন্যতম বড় কারণ জলাবদ্ধতা। প্রতি বছর বর্ষাকালে এ দুর্ভোগে দিশেহারা হয়ে পড়েন চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দারা। সেই ভোগান্তির সঙ্গে যুক্ত হয় ডেঙ্গুর প্রকোপ। আসন্ন বর্ষায় এই দুটি সমস্যা থেকে নগরবাসীকে রক্ষার্থে বিস্তর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এরই মধ্যে জলাবদ্ধতা ও ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন মাত্র ছয় মাস আগে মেয়রের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া শাহাদাত হোসেন; সম্প্রতি যাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমার্যাদা দিয়েছে সরকার।

গত বুধবার কালবেলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বর্ষায় জলাবদ্ধতা ও ডেঙ্গুই হবে আমাদের প্রধান সমস্যা। এরই মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ দুটি সমস্যা সমাধানে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। তবে চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও জলাবদ্ধতামুক্ত রাখার এই যাত্রায় সব নাগরিককে পাশে চাই।

জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, শপথ গ্রহণের পর গত ছয় মাসে নগরীর সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, ইনশাআল্লাহ সম্মিলিতভাবে কাজ করে জলাবদ্ধতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব এবং চট্টগ্রামবাসীকে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম হবো। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), বন্দর কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীসহ সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে। বিশেষ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নির্ধারিত কাজের বাইরেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ৩৬টি খাল খনন করছে জানিয়ে মেয়র শাহাদাত বলেন, এর বাইরের ২১টি খাল সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। ‘পাওয়ার চায়না’-এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা ২১টি খাল পুনর্খনন ও সংস্কারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চসিকের অনুমোদন এবং মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ন নিশ্চিত করা হলে তারা খাল সংস্কারের কাজ শুরু করবে।

তবে বর্ষাকাল আসন্ন হওয়ায় খাল সংস্কারের মতো সময়সাপেক্ষ কাজের অপেক্ষায় না থেকে জরুরি ভিত্তিতে খাল ও ড্রেন পরিষ্কারের কাজে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জানান চসিক মেয়র। তিনি বলেন, এটি একটি মাধ্যমিক স্তরের প্রকল্প হিসেবে বর্ষাকালের পরে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাখা হয়েছে। আমরা এখন প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছি বর্ষাকালের জলাবদ্ধতা মোকাবিলা। এজন্য খাল পরিষ্কার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার কাজ জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ময়লাকে সম্পদে রূপান্তরের জন্যও একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সলিড ওয়েস্ট থেকে বায়োগ্যাস, সার বা জ্বালানিতে রূপান্তরের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে নেদারল্যান্ডস, জাপান, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন এবং সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

সম্প্রতি খোলা ড্রেনে পড়ে ছয় মাস বয়সী শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় চসিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তবে মেয়র শাহাদাত জানালেন, শিশুটি নিখোঁজের পর তাকে উদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করেছেন তারা। পুরো বিষয়টি মেয়র নিজেই নজরদারি করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। এ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়—এখন থেকে এটাই আমাদের অঙ্গীকার। ছয় মাস বয়সী একটি শিশু আমরা হারিয়েছি। আর কাউকে হারাতে চাই না। আমরা সবাই মিলে একটি নিরাপদ ও সবুজ শহর গড়তে একযোগে কাজ করছি। ইতোমধ্যে সব সেবা সংস্থা নিয়ে আমরা একাধিকবার বৈঠকে বসেছি। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে সাড়া দিয়েছে।

নগরের নালা ও খালের সুরক্ষা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে চসিক মেয়র বলেন, কোথাও ম্যানহোলের ঢাকনা নেই, কোথাও স্ল্যাব মিসিং—এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে। এরই মধ্যে চসিকের ছয়টি জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী ও আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ওয়ার্ডে কোথায় কোথায় উন্মুক্ত খাল-নালা আছে, তা নির্ণয় করার কাজ চলছে। তালিকা তৈরি হলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

নাগরিকের সহযোগিতা কামনা করে তিনি আরও বলেন, ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি ও নালায় পলিথিন ফেলা নগর ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন থাকতে হবে। শহরকে নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এটা আমাদের শহর, আমাদের দায়িত্ব। চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও জলাবদ্ধতামুক্ত রাখার এই যাত্রায় সব নাগরিককে পাশে চাই।

এ বিষয়ে চসিকের সাম্প্রতিক উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরবাসীর অভিযোগ ও পরামর্শ সহজেই গ্রহণের জন্য ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। এ অ্যাপে যে কেউ নালা-নর্দমা, ম্যানহোল ঢাকনা, ডাস্টবিন বা খালের সমস্যা সংক্রান্ত ছবি আপলোড করে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগ পেলেই তা দ্রুততম সময়ে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে আমরা নাগরিক সেবাকে আরও কার্যকর ও জনবান্ধব করে তুলতে চাই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাকে শোকজ

ভেজাল গুড় খেলেই হতে পারে যেসব জটিল রোগ

শ্রীলঙ্কায় বন্যা ও ভূমিধসে মৃত্যু ৪১০, নিখোঁজ ৩৩৬

বেগম জিয়ার অসুস্থতা হাসিনার কারণেই : রিজভী

সীমান্ত দিয়ে ৩০ জনকে পুশইন বিএসএফের

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হবে উৎসবমুখর : প্রধান উপদেষ্টা 

পর্তুগালের জালে এক হালি গোল দিয়েও মন ভরেনি ব্রাজিলের

দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’

সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া যুবশক্তির ২ নেতাকে অব্যাহতি

‘আমি আর কত ক্ষতিগ্রস্ত হবো?’—প্রশ্ন বিজয়ের

১০

ক্লান্ত ও দুর্বল লাগলে যে ৫ খাবার বাড়াবে আয়রন ও হিমোগ্লোবিন

১১

কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে শীত, তাপমাত্রা ১২.৩ ডিগ্রি

১২

গুমের মামলায় ট্রাইব্যুনালে হাজির ১০ সেনা কর্মকর্তা

১৩

হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে ইংল্যান্ডের ডা. রিচার্ড বিলি

১৪

সেনাবাহিনীর অভিযানে দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের ১১ সদস্য আটক

১৫

ত্রুটিপূর্ণ নীতিমালা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ : আতঙ্কিত ঢাকার গল্প

১৬

অর্থ পাচার মামলায় ফেঁসে গেলেন নেহা শর্মা?

১৭

খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অনুপ্রেরণা : মির্জা মোস্তফা

১৮

এবার ওটিটিতে শাকিবের ডুবে যাওয়া সিনেমা

১৯

আগুনে বৃদ্ধের মৃত্যু, পুড়ল ১০ বাড়ি

২০
X