ছয় দফা দাবি পূরণের সুস্পষ্ট রূপরেখা না পাওয়ায় সারা দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে লাগাতার অচলাবস্থা তৈরির পথে হাঁটছে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্লাস, পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছেন তারা। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্লাসরুম, অধ্যক্ষের রুমসহ বেশ কয়েকটি একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শাটডাউন কর্মসূচি পালনকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে ৬ দাবি পূরণ না হওয়ায় কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বন্ধের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মাশফিক ইসলাম বলেন, সাত মাস ধরে তুলনামূলক শিথিল কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চলেছে; কিন্তু কারিগরি শিক্ষা বিভাগ থেকে কোনো ফল পাওয়া যায়নি। দাবি বাস্তবায়ন না করে বারবার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এরপর গত ১৬ এপ্রিল চূড়ান্ত কর্মসূচি হিসেবে সারা দেশে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হয়। আবারও বৈঠকে ডাকা হয়। শিক্ষার্থীরা ওই বৈঠকে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কারণ, যাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল সেসব দায়িত্বশীল ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
মাশফিক ইসলাম আরও বলেন, আমাদের দাবি বাস্তবায়নে কারিগরি মাদ্রাসা বিভাগ রূপরেখা বাস্তবায়নে একটি কমিটি করে দিলেও, এখন পর্যন্ত কমিটির একটি মাত্র বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা কোনো সফলতা দেখছি না। আমাদের দাবি ও দফাগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে কীভাবে কাজ করা হবে—এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমরা পাচ্ছি না। তাই সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একযোগে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছি। ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য রূপরেখা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। একাডেমিক ও প্রশাসনিকসহ সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
এর আগে, সোমবার রাতে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের দপ্তর সম্পাদক সাব্বির আহমেদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাটডাউন ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে তাদের দাবির বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ছয় দফা না হয় মৃত্যু।’
ঢাকা পলিটেকনিকে ঝোলানো হলো ২২টি তালা: ছয় দফা দাবিতে সারা দেশে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় তারা বিভিন্ন ভবনের ফটক ও কক্ষের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। তার আগে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কক্ষগুলো থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতির কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত, ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটিকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন রূপরেখার একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন