কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:০৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, জয় করেই এগিয়ে যাবে জনগণ

ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, জয় করেই এগিয়ে যাবে জনগণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই, ভয়কে জয় করে বাংলাদেশের জনগণ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে। নৌকা সারাজীবন উজান ঠেলে ঠেলেই এগিয়ে গেছে। ঝড়-ঝঞ্চা পাড়ি দিয়েই আজকে তীরে ঠেকে জনগণের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে, অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে, নৌকা মার্কা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছে, নৌকা মার্কাই স্মার্ট বাংলাদেশ দেবে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। দেশের প্রথম এই উড়াল সড়কের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাক্ষী হয়ে থাকতে সমাবেশস্থলে লাখো মানুষের আগমন ঘটে। পুরোনো বাণিজ্য মেলা মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝেমধ্যে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম দেখে কেউ কেউ একটু ঘাবড়ে যান। স্যাংশন ভিসা নীতি আসে। আমার স্পষ্ট কথা, এই মাটি আমাদের, আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছি জাতির পিতার নেতৃত্বে। এসব ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, বাংলাদেশের মানুষ জানে অধিকার আদায় করতে। তবে বাংলাদেশ তো ছয় ঋতুর দেশ, কখনো বর্ষা, কখনো ঝড়, কখনো জলোচ্ছ্বাস, কখনো রৌদ্রোজ্জ্বল—সব অভিজ্ঞতাই আছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজ যারা আন্দোলনের নামে আমাদের প্রতিমুহূর্তে ফেলে দিচ্ছে, তাদের বলতে চাই, এখানে যারা উপস্থিত তাদের বলতে চাই, ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে, হারা শশীর হারা হাসি, অন্ধকারেই ফিরে আসে’। তিনি আরও বলেন, আত্মবিশ্বাস রেখে জনগণের কল্যাণে কাজ করলে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব—আমরা তা প্রমাণ করেছি। এ জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, হত্যা অনেক কিছু দেখেছি। তা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের একটাই কারণ, ২০০৯ সাল থেকে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীল পরিবেশ রাখতে পেরেছি, তার কারণেই আজকের এই উন্নয়ন।

যারা ‘গণতন্ত্র উদ্ধার’ করবেন তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের জন্মই হয়েছে সংবিধান লঙ্ঘন করে, উচ্চ আদালতের রায়ে যে ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষিত হয়েছে, তাদের হাতে গড়া দল কি গণতন্ত্র দেবে? তারা তো গণতন্ত্র দিতে জানে না, তার পরও তারা আন্দোলনের নামে অনেক কথা বলে।

জাতির পিতার উক্তি ‘ভিক্ষুক জাতির কোনো মর্যাদা থাকে না’ স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা এ জাতিকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করেছিল। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে বলেই আজকে আর আমাদের কারও কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যেতে হবে না। আজকে একটা সাময়িক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে স্যাংশন ও কাউন্টার স্যাংশনের কারণে সাময়িক ধাক্কাটা এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অন্ধকারে ছিল যে বাংলাদেশ সেটি আজকে আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি, অর্থনৈতিক উন্নতি করেছি, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, বেকার সমস্যা তিন ভাগে নেমে এসেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করেছি। আমার একটাই লক্ষ্য বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা। যে অন্ধকার যুগ ছিল, সেখান থেকে আলোর পথে যাত্রা শুরু করা। আমরা যে ওয়াদা করেছি, তা একে একে পূরণ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যারা হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্র ও সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে সেনা আইন ভঙ্গ করে ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। নিজেদের আখের গুছিয়েছে শুধু। ২০০১ সালে আবার চক্রান্ত। ১৯৭৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল কি দিয়েছিল বাংলার মানুষকে? কিছুই দিতে পারেনি। তারা শুধু লুট করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে। বিএনপির চারদলীয় জোট পায় ৩০ আসন। ২০০৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছি। ২০২১ সালে সুবর্ণজয়ন্তী ও ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকালেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।

সর্বজনীন পেনশনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি চাকরিজীবীরা অবসর ভাতা পায়, সাধারণ মানুষ পায় না। সাধারণ মানুষের যখন একটু বয়স হবে, কাজ করার ক্ষমতা থাকবে না তখন যাতে তারা পেনশন পায়, সেই কারণে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। ১৮ বছর হলেই পেনশন স্কিমে ঢুকতে পারবেন, ৪০ বছর হলেই টাকা তুলতে পারবেন। তখন আর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে থাকবে না। শুধু বর্তমানের উন্নয়ন নয়, ভবিষ্যৎ যেন আলোকোজ্জ্বল হয় সেজন্য এই পেনশন স্কিম চালু করেছি। এটা আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল। সেই ওয়াদা রক্ষা করতে পেরেছি।

রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের উন্নয়নে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে দেশের মানুষের জন্য আরেকটি উপহার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আপনাদের উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সেতু বিভাগের সচিব মঞ্জুর হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন।

মঞ্চে ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ এ আরাফাত এমপি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

স্বামীর মোটরসাইকেল থেকে পড়ে স্ত্রীর মৃত্যু

রওনা দিয়েছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, পাল্টা প্রস্তুতি ভেনেজুয়েলার

দেশে হবে আরও ৫১৬ কমিউনিটি ক্লিনিক

ফেসবুকে আমেরিকার বিরুদ্ধে কিছু বললেই পাবেন না ভিসা

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে হতাহত পরিবারের পাশে তারেক রহমান

আশুলিয়ায় বিপুল অবৈধ সিগারেটসহ আটক ২

স্কুলছাত্র রনি হত্যা, যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

সরকারি অনুদানে নির্মাণাধীন চলচ্চিত্রের মানোন্নয়নে সহযোগিতা করা হবে : মাহফুজ

শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালকের পদায়ন স্থগিতের দাবি

সিলেটে পাথর লুটে ১৩৭ নাম

১০

মির্জা ফখরুলের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্য জানালেন ডা. জাহিদ

১১

ইতালিতে বাড়ছে অনিয়মিত অভিবাসী, শীর্ষে যে দেশ

১২

ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পৃথিবীর কেউ ঠেকাতে পারবে না : খোকন

১৩

ভারতে পালিয়ে থাকা আ.লীগ নেতাদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ

১৪

আমলাতন্ত্র সংস্কারের উদ্যোগ স্তিমিত হয়ে গেছে : বিআইপি

১৫

চাকরি দিচ্ছে দারাজ, কাজ করতে পারবেন নিজ নিজ জেলায়

১৬

তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে : টুকু

১৭

‘জুলাই সনদ’ নিয়ে লিখিত মতামত দিল বিএনপি

১৮

‘সিলেটে পাথর লুটে জড়িতদের পুরো তালিকা প্রকাশ করবে প্রশাসন’

১৯

নির্ধারিত সময়ে হয়নি ওষুধের তালিকা হালনাগাদ ও মূল্য নির্ধারণ প্রতিবেদন

২০
X